এই সময়, সিউড়ি ও সাঁইথিয়া: ভাইরাল অডিয়ো কি বীরভূম জেলা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে বদল আনতে চলেছে?
প্রশ্নটা উঠছে, কারণ, গত ক’দিনে বীরভূমের ‘প্রভাবশালী’ তৃণমূল নেতাদের একাংশের গতিবিধিতে ইঙ্গিতপূর্ণ কিছু পরিবর্তন এসেছে। দলের অন্দরে শিবির বদলানোর, এমনকি তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম-শিবিরে নাম লেখানোর প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।
বুধবার বীরভূমের কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকার বনডাঙায় তৃণমূলের পার্টি অফিসে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেখানে হাজির ছিলেন জেলা রাজনীতিতে ঘোর অনুব্রত-বিরোধী বলে পরিচিত কাজল শেখ।
তাৎপর্যপূর্ণ হলো, ওই বৈঠকে দেখা গিয়েছে অনুব্রত-অনুগামীদের একাংশকেও। যা বীরভূমের গত এক দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরল বলেই মনে করছেন অনেকে। বীরভূম জেলায় কেষ্টর ‘খাস লোক’ বলে পরিচিত স্থানীয় তৃণমূল নেতা তুষার মণ্ডল।
তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে জমি দখলের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন কাজল শেখের ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য সাধন মুখোপাধ্যায় ও দলের সংখ্যালঘু সেলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মহম্মদ ইউনুস। এ দিন কঙ্কালীতলা পার্টি অফিসের বৈঠকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখা যায় যুযুধান তুষার এবং সাধন, ইউনুসদের। বৈঠকের মধ্যমণি অবশ্যই ছিলেন কাজল শেখ।
এ দিকে, তুষারের সঙ্গে বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ স্থানীয় বেশ কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্য। বোলপুরের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের মধ্যে জল্পনা, যে তুষারের বিরুদ্ধে এতদিন রাজপথে বিক্ষোভ দেখাতেন সাধনরা, বুধবার কোন ম্যাজিকে তাঁরাই একসঙ্গে হাসিমুখে মিটিং করলেন? রাজনীতিতে কিছুই অসম্ভব নয় তা হলে!
বীরভূম জেলা রাজনীতির ‘হাই–প্রোফাইল’ এই বৈঠক প্রসঙ্গে সাধন এবং ইউনুস অবশ্য একসুরে বলেন, ‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জমি কেলেঙ্কারির ব্যাপারে প্রশাসন এবং দলকে যা জানানোর জানিয়েছি। এর পরে নেতৃত্ব যা করার করবেন। দলের স্বার্থেই ওঁদের নিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।’
তুষারের কথায়, ‘রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধু বা চিরস্থায়ী শত্রু বলে কিছু হয় না। পঞ্চায়েতের উন্নয়নের স্বার্থে পঞ্চায়েত সদস্য এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের সঙ্গে সভাধিপতি দেখা করেছেন।’ তবে এ বিষয়ে কাজলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তিনি ফোন তোলেননি। মেসেজেরও জবাব দেননি।
বীরভূমে তৃণমূলের অন্দরের এই দড়ি টানাটানির মধ্যে জেলায় নিজেদের শক্তি বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। এ দিন যখন কঙ্কালীতলায় তৃণমূলের মধ্যে ‘শিবির বদল’ পর্ব চলছিল, তখনই বীরভূমের সাঁইথিয়া বিধানসভার কুনুরি-সহ লাগোয়া কিছু গ্রামের ১৫০ জন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
গেরুয়া শিবিরের দাবি, তৃণমূলের দলীয় নেতৃত্বের অযোগ্যতা ও সংখ্যালঘু তোষণের কারণে পুরোনো দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন এই ১৫০ জন।
এই ঘটনাপরম্পরা থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ভাইরাল অডিয়ো বিতর্কের জেরে বীরভূম জেলা তৃণমূলে নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে? একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ অনুব্রত ওরফে কেষ্ট কিঞ্চিৎ ‘ব্যাকফুটে’ বুঝে তাঁর অনুগামীদের কেউ কেউ কি শিবির বদলের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন, কেউ বা ফুল–বদলের পথে?