• SSC-র নিয়োগের বিধি নিয়ে মামলায় পিটিটিআই-পর্বের স্মৃতি
    এই সময় | ০৫ জুন ২০২৫
  • স্কুল-স্তরে নিয়োগ শুরুর মুখে বিধি ও বিজ্ঞাপন ঘিরে বিতর্ক, প্রশ্ন এবং মামলায় নিয়োগ আদৌ মসৃণ ভাবে হবে কি না, সে নিয়ে আবারও সংশয়ের মেঘ জমছে। তবে এমন অবস্থা একেবারে নজিরবিহীন নয় রাজ্যে।

    মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিধি এবং এসএসসি–র বিজ্ঞাপন বেরোতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে, মামলাও হয়েছে হাইকোর্টে। অতীতে ২০০৯ সালেও নিয়োগ ঘিরে এমনই বিতর্ক ও মামলার সাক্ষী হয়েছিল রাজ্য। তবে সে বার বিতর্ক বেধেছিল প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম ঘিরে।

    ২০০৯–এ রাজ্যের ১৯টি জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ (ডিপিএসসি) একসঙ্গে সাড়ে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি‍‍ল। তার আগের চার বছর ধরে শতাধিক প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিটিআই) নিয়ে মামলায় শিক্ষক নিয়োগই বন্ধ ছিল।

    প্রাথমিকের নিয়োগ বিধি ও বিজ্ঞাপন বেরোতেই এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে ডাক পাওয়া চাকরিপ্রার্থীরা মামলা করেন। তাঁদের দাবি ছিল, নতুনদের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে এঁটে ওঠা অসম্ভব। তাই পুরোনোদের পৃথক নিয়মে নিয়োগ করা হোক।

    কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি সৌমিত্র পাল সেই আবেদনেই মান্যতা দিয়েছিলেন। একই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পুরোনো ও নতুনরা আলাদা নিয়মে অংশ নিয়েছিলেন। বিচারপতির নির্দেশ ছিল, ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্যপদ ও তার পর ফাঁকা হওয়া পদে নিয়োগের পদ্ধতি আলাদা করতে হবে।

    এ বার এসএসসি-র নিয়োগের নয়া বিধি ও বিজ্ঞাপনে আপত্তি জানিয়ে ২০১৬–র বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা মামলা করেছেন হাইকোর্টে। তাঁদের দাবি, পুরোনো বিধি মেনেই নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হবে এবং তা শুধু ২০১৬–র আবেদনকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

    আজ, বৃহস্পতিবার বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর গ্রীষ্মাবকাশকালীন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। ৩৫,২৭৬ শিক্ষক পদে নিয়োগের ভবিষ্যৎ কী হয়, আজ সে দিকে তাকিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণ–তরুণীর সঙ্গে শিক্ষা প্রশাসকরাও।

    রাজ্যের পিটিটিআইগুলির ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশনের (এনসিটিই) স্বীকৃতি, বৈধতা এবং অনুমোদন নেই—এই অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল। ২০০৬–এ তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি বিকাশশ্রীধর সিরপুরকর ও বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ পরিকাঠামো না থাকায় ১২২টি পিটিটিআই–এর অনুমোদন খারিজ করে দেন।

    এই সব প্রতিষ্ঠানে কেউ প্রশিক্ষণ নিলে তাঁদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না বলেও রায়ে জানানো হয়। আবার ২০০৮–এর ১ অক্টোবর হাইকোর্টের তখনকার প্রধান বিচারপতি সুরিন্দর সিং নিজ্জর ও বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের বেঞ্চও জানিয়ে দেয়, এনসিটিই-র অনুমোদনহীন পিটিটিআইগুলি অবৈধ।

    সেই সময়ে রাজ্যের পিটিটিআইগুলিতে এক বছরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত, তা কেন্দ্রীয় আইন স্বীকৃতও ছিল না। কারণ, এনসিটিই’র বিধিতে দু’বছরের পিটিটিআই প্রশিক্ষণের নিয়ম ছিল। এই আইনি জটিলতায় ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত প্রাথমিকে নিয়োগ বন্ধ ছিল।

    কিন্তু সেই জট কাটার আগেই ২০০৯–এর ৩০ অগস্ট রাজ্যের ১৯টি জেলার ডিপিএসসি এক যোগে সাড়ে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। তৎকালীন অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি কে জন কোশি ওই বছরের ২৪ জুলাই প্রাথমিকে নিয়োগের বিধি বদলের বিজ্ঞপ্তিও জারি করেন।

    রাজ্যের সেই সিদ্বান্ত বাতিল করে বিচারপতি সৌমিত্র পাল নির্দেশ দেন, ২০০২–এর নিয়মে ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্যপদে নিয়োগ হবে। ২০০২–এর ওই বিধিতে বলা ছিল, লিখিত পরীক্ষায় ১০, শিক্ষাগত যোগ্যতায় ৬৫, শিক্ষক প্রশিক্ষণে ২২ এবং কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে ৩ নম্বর করে বরাদ্দ থাকবে।

    আর ২০০৭-এর ১ জানুয়ারির পর ফাঁকা হওয়া পদগুলিতে ২০০৯–এর বিধিতে নিয়োগের কথা বলে হাইকোর্ট। ২০০৯–এর বিধিতে লিখিত পরীক্ষায় ৩০, ইন্টারভিউয়ে ১৭ এবং এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে ৩ নম্বর বরাদ্দ ছিল।

    কিন্তু ২০১০–এ সেই বিধি সংশোধন করে ইন্টারভিউয়ে বরাদ্দ কমিয়ে ৫ ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় সর্বোচ্চ ১২ নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছিল। আজ, বৃহস্পতিবার কার্যত একই পরিস্থিতিতে বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর এজলাসে এসএসসি-র ৩৫,৭২৬ পদে নিয়োগের বিধি ও বিজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে দায়ের মামলার শুনানি হতে চলেছে।

    মামলাকারী ২০১৬–র বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা পুরোনো বিধিতে তাঁদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬–র নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরো বাতিল করায় নতুন করে যে পরীক্ষা হবে তা ২০১৬–র বিধি অনুযায়ীই হওয়া উচিত।

  • Link to this news (এই সময়)