এই সময় আলিপুরদুয়ার: গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে সকাল-সন্ধ্যা রোগী দেখা তাঁর কাজ। পেশা ডাক্তারি হলেও হঠাৎই তাঁর নেশা চাপল ফল চাষে। যেমন তেমন স্থানীয় বা সহজলভ্য ফল নয়, একেবাবে ড্রাগন ফ্রুট। নিজের সামান্য জমিতে এই ফল চাষ করে আলিপুরদুয়ারে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছেন মহাকালগুড়ির দীপক দাস।
মহাকালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের চেপানী-ধারসী জাতীয় সড়কের কাছে তাঁর চেম্বার। এখনও দু’বেলা প্র্যাকটিস করেন। ডাক পেলে আবার রোগীর বাড়িতে হাজির হন। তার মধ্যেই সময় বের করে ফল-চাষ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ফলের প্রচলন বেশি হলেও এ দেশেও যে ক্রমশ তার চাহিদা বাড়ছে, বুঝতে পেরেছিলেন গ্রামীণ চিকিৎসক। তাই বছর তিনেক আগে বর্ধমানে গিয়ে ৪০০টি চারা কিনে নিজের জমিতে লাগিয়েছিলেন। প্রতিটি চারার দাম পড়েছে ১১০ টাকা। আর জমিতে সমস্ত চারা লাগাতে তাঁর খরচ হয় ১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা।
এক বছর যেতে না-যেতেই ফল ধরেছে গাছে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এলাকার বিভিন্ন দোকানে তাঁর বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন ফল সরবরাহ করে গত বছর আয় করেছিলেন ১০ হাজার টাকা।
পরের বছরে আয়ের অঙ্কটা চার গুণেরও বেশি। চলতি বছরেও ভালো ফল ধরেছে। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘এটা দীর্ঘমেয়াদী ফসল। এর উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়বে। এক একটি চারায় এখনও ২০-২৫ বছর ফলন হবে।’
জানা গিয়েছে, এটি একটি ক্যাকটাস প্রজাতির গাছ। এই ড্রাগন ফ্রুটের নানা রকমফের রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘এটি রক্তাল্পতা দূর করতেও কার্যকরী। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এর মধ্যে।’
গ্রামীণ চিকিৎসক হিসেবে দীপকের নামডাক ভালোই ছিল। সেই সঙ্গে এই চাষ করে এখন আরও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকে দু’টি জায়গায় ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। তা ছাড়া, দীপকের সাফল্য দেখে এখন জেলার প্রতিটি ব্লকে কমবেশি এই ফলের চাষ শুরু করেছেন অনেকে।
দীপক বলেন, ‘গত ২ বছরের তুলনায় এ বার সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। আগামী দিনে আরও বাড়বে। এলাকার অনেকেই ড্রাগন ফ্রুট চাষের পরামর্শ নিতে আসছেন।’ শুধু চিকিৎসা নয়, অর্থকরী ফসল চাষেও দিশা দেখাচ্ছেন দীপক।