পার্থ চৌধুরী: মেমারির জোড়া খুনে অভিযুক্ত হুমায়ুন কবিরকে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে নিয়ে আসা হল। বর্ধমানেই মেমারি থানার পুলিসের 'শোন অ্যারেস্টের' আবেদনের শুনানি হবে। তা মঞ্জুর হলে পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানান হবে। ভ্যান থেকে নেমে বাবা-মাকে খুনের কারণ জানাল হুমায়ুন।
গত সপ্তাহেই বাবা-মাকে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ ওঠে হুমায়ুন ওরফে আশিকের বিরুদ্ধে । বনগাঁতে প্রবল ঝামেলার পর পুলিসের হাতে ধরা পড়ে নৃশংসভাবে খুন হওয়া দম্পতির ছেলে হুমায়ুন কবির ওরফে আশিক। তার আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন, সে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকত। তার বিয়ে হয়েছিল কয়েক বছর আগে। কিছুদিন আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকায় তাকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসেন বাবা মা। সেটাই কাল হয় তাদের। এদিন বর্ধমানে প্রিজন ভ্যান থেকে নামার সময় সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করে, বাবা-মাকে মারলে কেন? প্রশ্ন শুনে নীচু স্বরে হুমায়ুন বলে, 'দোষ করেছিল বাবা-মা'।
আত্মীয়রা কী বলছে
তার আত্মীয়রা জানান, ছোট থেকে কোন কিছুর অভাব ছিল না হুমায়ুনের জীবনে। অনেক সম্পত্তি। পড়াশুনাতেও ভাল। আর বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা সম্ভব ছিল না। অথচ তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিল সে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঘটনার আগের রাতেও বাবার সঙ্গে নামাজ পড়তে এসেছিল হুমায়ুন। অন্য নামাজীরা শুনেছেন, তার কাছে ছুরি ছিল। সেটা সে অনলাইনে আনিয়েছিল। এমনিতে চুপচাপ ছেলে হিসেবেই হুমায়ুন পরিচিত ছিল । ল্যাপটপে পড়াশুনা নিয়েই থাকত।
আত্মীয়রা আরো জানান, ছোট থেকেই খুব মেধাবী ছিল সে। দিল্লিতে চাকরি পাবার পর মাঝে মাঝে বাড়ি আসত। কিন্তু সে কারো সাথে মিশত না। একাই ঘরে বসে থাকত। পরিবারটিও কারো সঙ্গে খুব একটা মিশত না। নামাজে গিয়ে দেখা হত।
মেধাবী ছেলেটি এমন নৃশংসভাবে বাবা মাকে খুন করে দেহ বাইরে টেনে এনে ফেলবে ভাবতেও পারেননি প্রতিবেশীরা।
গত সপ্তাহের বুধবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে ওই জোড়া খুন নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। সকালে রাস্তার উপর থেকে উদ্ধার হয় প্রৌঢ় দম্পতির দেহ।
প্রাথমিক তদন্তে কী উঠে আসে
প্রাথমিকভাবে জানা যায় , ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনা হয়েছিল তাদের দেহ। তদন্তে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তর্গত মেমারি থানার অন্তর্গত মেমারি-১ ব্লকের কাশিয়ারা মুক্তারবাগান। আশিকের বাবা মায়ের নাম, মোস্তাফিজুর রহমান (৬৫) ও মমতাজ পারভীন (৫৫)। বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের পুত্র থাকতেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানা যায়, ছেলে হুমায়ূন বিবাহিত হলেও বহুদিন বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। ছেলেটি কাজ করতে করতে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজ করে বাড়ি নিয়ে চলে আসে। ৪ মাস ধরে এই বাড়িতে সে থাকত বাবা মায়ের সঙ্গে। আরও জানা গেছে, বাড়ির মধ্যে কোনো কিছু চুরি না গেলেও সিসিটিভির হার্ডডিস্ক উধাও।
এদিকে ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার সায়ক দাস, অতিরিক্ত পুলিশসুপার অর্ক ব্যানার্জি সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। আসে ফরেন্সিক টিম। তারা বাড়ির ভিতরে ঢুকে নমুনা সংগ্রহ করেন।পুলিশ তদন্ত শুরু করে। রাতেই বনগায় পুলিসের হাতে ধরা পড়ে হুমায়ুন কবির ওরফে আশিক।