• ৫ বছরে আড়াই লক্ষ নতুন বাইক! দ্বিচক্রযানের বাড়বাড়ন্তই মাথাব্যথা কলকাতা পুলিশের
    প্রতিদিন | ০৫ জুন ২০২৫
  • নব্যেন্দু হাজরা: শহর কলকাতার রাস্তায় বাইকের হুড়োহুড়ি। আর তাতেই দুর্ঘটনার বাড়বাড়ন্ত। বাড়ছে মৃত্যুও। গত পাঁচ বছরে শহর কলকাতায় আড়াই লক্ষের বেশি নতুন দু-চাকার গাড়ি নেমেছে। তার মধ্যে বাইক এবং স্কুটি উভয়ই রয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই শহরে রেকর্ড ৫৭,০৩৩টি নতুন দু-চাকা গাড়ি নথিভুক্ত হয়েছে। যা পরিবহণ দপ্তরের খাতায় রেকর্ড। আর শহরের রাস্তায় বাইকের সংখ্যাবৃদ্ধি পথ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অশনি সংকেত দেখাচ্ছে।

    করোনাকাল থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে এই দু’চাকা কেনার হিড়িক শুরু হয়েছে। বাস, ক্যাব ছেড়ে বাইকে চড়েই অফিস যাচ্ছেন বহু মানুষ। যার কারণে সরকারি-বেসরকারি বাসে যাত্রী সংখ্যাও অনেকটাই কমেছে। কিন্তু বিপদ বেড়েছে অন্যত্র। নিত্য এত বেশি বাইক চলাচলের কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনা। বিশেষত বড় রাস্তা বা বাইপাসে রাস্তার বাঁদিক দিয়ে সারি সারি বাইক চলে। বাস থেকে নামার সময় অনেকেই তা খেয়াল করেন না। যার জেরে লাগে ধাক্কা। এই দুর্ঘটনা রোধ করতে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া আর কোনও পথ দেখছেন না ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা।

    তথ্য-পরিসংখ্যান  অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর থেকে কলকাতায় ২.৫ লক্ষেরও বেশি (মোট ২,৫২,০৫০) নতুন দু-চাকা গাড়ি যুক্ত হয়েছে, যা শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিয়েছে। বেলতলা পিভিডি, সল্টলেক, কসবা ও বেহালা, এই চারটি আঞ্চলিক পরিবহণ অফিস (আরটিও) থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছরই রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু পিভিডি (বেলতলা) থেকেই মহামারীর পর ৯০,০০০-এরও বেশি গাড়ি নথিভুক্ত হয়েছে। কলকাতার চারটি আরটিও থেকে ২০২০ সালে ৪৯১৮৫টি, ২০২১-এ ৪৭৪২৫, ২০২২ সালে ৪৯২২৪, ২০২৩ সালে ৪৯১৮৩ এবং ২০২৪ সালে রেকর্ড ৫৭০৩৩ টি বাইক নথিভুক্ত হয়েছে।

    মহামারী মানুষের যাতায়াতের অভ্যাস আমূল বদলে দিয়েছে। বহু মানুষ ভিড় এড়াতে ব্যক্তিগত যানবাহন বেছে নিচ্ছেন। পাশাপাশি, অনলাইন ডেলিভারি পরিষেবা এবং বাইক-ট্যাক্সির চাহিদা বেড়ে যাওয়াও বাইকের সংখ্যাবৃদ্ধির একটা বড় কারণ। এতে জীবিকা অর্জনের নতুন পথ খুললেও শহরের রাস্তায় ভিড় ও ঝুঁকি অনেক বাড়িয়েছে। পাশাপাশি লাইসেন্স পাওয়া বিশেষত লার্নার পাওয়ার পদ্ধতি এখন সহজ হয়ে যাওয়ার কারণে কাঁচা হাতেই বাইক ছোটাচ্ছেন অনেকে। “দু-চাকা গাড়িই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ। দুর্ঘটনার কারণ এই বাইকের বেপরোয়া চলাচল।” বুধবার দক্ষিণ কলকাতার এক ব্যস্ত মোড়ে দায়িত্বে থাকা এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বলছিলেন কথাগুলো। তাঁর কথায়, অনেক বাইক চালক সিগন্যাল অমান্য করে ফাঁক দিয়ে গাড়ি চালান, লেন ও মোড় ঘোরার নিয়ম মানেন না। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে দূষণও।

    ট্রাফিকেরই এক কর্তার কথায়, “দু-চাকা গাড়ি অন্য সব যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়। যেমন খুশি চালানোর ফলে অন্যান্য গাড়িকে থামিয়ে দেয়। ফলে সব গাড়ি বেশি সময় ধরে স্টার্ট অবস্থায় থাকে, যার ফলে পিএম ১০ এবং পিএম ২.৫ নির্গমন বেড়ে যায়।” পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অত্যধিক বাইক বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে আরও গভীর একটি সমস্যা-জনপরিবহণ ব্যবস্থার অবনতি। রাস্তায় সরকারি বাস কমে যাওয়া এবং বেসরকারি বাসের মন্থর গতির কারণে মানুষ নিজস্ব বাইকে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। যাতে অফিস বা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে বিলম্ব না হয়। এক পরিবহণ বিশেষজ্ঞের কথায়, ট্র্যাফিক জ্যাম, বায়ুদূষণ ও পথ নিরাপত্তা ? এই তিনটি সমস্যা এখন একে অপরের সঙ্গে জট পাকিয়ে মানুষের আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)