• ‘অভয়া দিদি থাকলে…’, বন্দে ভারতে যাত্রীকে বাঁচিয়ে অভয়া-স্মরণ RG করের চিকিৎসকের
    প্রতিদিন | ০৬ জুন ২০২৫
  • সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ট্রেনের শৌচালয়ের সামনে পড়ে গিয়ে ব্লাড প্রেশার নেমে গিয়েছে অনেকটাই। ৯০ বাই ৭০। হার্টের পালস রেট বেড়ে ১১৮। যেখানে স্বাভাবিক থাকার কথা ৭২। বারবার বমি করছেন সত্তর পার করা বৃদ্ধ যাত্রী। কাঁপছেন থরথর করে। অসংলগ্ন সব কথা বলে যাচ্ছেন। পরিবারের সকলের অসহায় মুখ। এমন মুমুর্ষ রোগীকে চলন্ত ট্রেনে বাঁচিয়ে
    মানবিকতার পরিচয় দিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক শল্য চিকিৎসক।

    হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে গত বুধবার বিনা চিকিৎসায় এক যাত্রীর মৃত্যুর পরেই গত মঙ্গলবার নিউ জলপাইগুড়ি- হাওড়া বন্দে ভারতে এই চিকিৎসকের মানবিকতার ঘটনা সামনে আসে। ঐশ্বর্য রায় নামে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ওই চিকিৎসকের দ্রুত পরিষেবায় অভিভূত ওই বেঁচে যাওয়া যাত্রীর পরিবার। ওই চিকিৎসকের বাড়ি পুরুলিয়া শহরের রেনি রোড দেবীমালায়। গত দেড় বছর ধরে তিনি আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক। উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা তথা বন্দে ভারতের ওই যাত্রী ৭০ বছরের অমল কুমার এখন স্থিতিশীল।

    চিকিৎসক ঐশ্বর্য লাটাগুড়িতে গিয়েছিলেন তাদের একটি চিকিৎসক সংগঠনের কনফারেন্সে। সেখান থেকেই তাঁর বাবা-মায়ের সাথে ফিরছিলেন ওই তরুণী চিকিৎসক। নিউ জলপাইগুড়ি-হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে সি এইট কামরায় ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার বিকাল তিনটে নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ওই প্রিমিয়াম ট্রেন ছাড়ার পর বিকাল সাড়ে চারটে-পাঁচটা নাগাদ ওই ট্রেনেই মাইকে ঘোষণা করা হয় সি নাইনে এক যাত্রী অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন। কোনও চিকিৎসক থাকলে তাঁর চিকিৎসার অনুরোধ করা হয় রেলের তরফে।

    চিকিৎসক ঐশ্বর্য যেখানেই যান, তাঁর কাছে স্টেথো, ব্লাড প্রেশার পরিমাপ যন্ত্র সহ ওষুধপত্র থাকে। নিজের ট্রাভেল ব্যাগ থেকে সেসব নিয়ে ওই কামরায় যান দ্রুত। যাওয়ার পথেই দেখেন এক বৃদ্ধ
    যাত্রী বাথরুমের সামনে পড়ে রীতিমতো কাতরাচ্ছেন। ওই চিকিৎসকের কথায়, ” ভীষণ অসুস্থ ছিলেন ওই বৃদ্ধ । ব্লাড প্রেশার একেবারে নেমে গিয়েছিল। যেখানে নরমাল হার্টের পালস রেট থাকে ৭২। সেটা বেড়ে হয়ে গিয়েছিল ১১৮। আমার কাছে যা ওষুধপত্র ছিল তাকে সেখানে খাইয়ে আমিও যাত্রীর পাশেই ছিলাম।” হাওড়া আসার বেশ কিছুক্ষণ আগে তিনি সুস্থ হয়ে নিজের আসনে বসেন।

    ঐশ্বর্যের কথায়, ” তখন রাত সাড়ে দশটা হবে। হাওড়া ঢোকার মুখে উনি হাসিমুখে আমাকে জানান আমাকে কি কোথাও কোন হাসপাতালে যেতে হবে? আমি বললাম একটা ইসিজি করিয়ে নেবেন। ওই যাত্রীকে বাঁচাতে পেরে আমার যে কি ভালো লেগেছে আমি বলে বোঝাতে পারবো না। ওই দিনটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ অভয়া দিদি থাকলে তিনিও এভাবে মানুষের প্রাণ বাঁচাতেন। আমরা শপথ নিই এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াব। সমাজ জীবনে এটাই আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য।” ওই চিকিৎসকের এমন মানবিকতায় ভীষণই খুশি ওই অসুস্থ যাত্রীর পরিবার। ওই বৃদ্ধ ও তার পরিবারের সদস্যরা সপরিবারে দার্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই ওই ট্রেনে হাওড়া ফিরছিলেন। তারপরেই অসুস্থ হয়ে যান অমলবাবু। চিকিৎসকের প্রশংসায় রেল, আরপিএফ সহ যাত্রীরা। তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলেই।
  • Link to this news (প্রতিদিন)