‘আমাদের আর পাবি না’, ভাইকে মেসেজ করে প্রেমিকার বিয়ের ৫ দিন আগে ‘আত্মঘাতী’ পুরুলিয়ার যুগল
প্রতিদিন | ০৬ জুন ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এ যেন কবি জসীমউদ্দীনের নকশি কাঁথার মাঠের উপাখ্যান! ওই কবিতায় সাজু যেভাবে তাঁর কাঁথায় নিজেদের প্রেমের ছবিকে এঁকেছিলেন। এমনকি তার প্রেমিক রুপাই-র ফেরার হয়ে যাওয়ার ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন ওই কাঁথায়। ঠিক যেন ওই কবিতার প্লট। পুরুলিয়ার কেন্দার অসম প্রেমের ঘটনায়। মোবাইলে নিজেদের প্রেমগাঁথা লিখে জীবনের বৃত্ত থেকে নিজেদের সরিয়ে দিলেন তাঁরা। প্রেমিকার বিয়ের পাঁচদিন আগে প্রেমিক নিজের মামাতুতো ভাইয়ের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়, “আমাদেরকে আর পাবি না। আমরা জীবন ছেড়ে যাচ্ছি।” বুধবার ভোর রাতে ওই প্রেমিক যুগলের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অসম প্রেমের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকস্তব্ধ প্রায় সমগ্র কেন্দাই।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত প্রেমিক যুগলের নাম শৌভিক মণ্ডল (২৪ ) ও সাবিত্রী সিং সর্দার (১৮) শৌভিকের বাড়ি কেন্দার রাজনওয়াগড়ে। সাবিত্রী থাকতেন কেন্দা থানার ধবনি গ্রামে। কেন্দার তালতল জঙ্গল থেকে ওই তরুণ-তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের চাকলতোড় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় টামনা থানায় দুটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সাবিত্রী ও শৌভিকের স্কুল জীবন থেকেই প্রেম। গত ৫ বছর ধরে তারা এই সম্পর্কে ছিলেন। সাবিত্রী আদিবাসী। সৌভিক ভিন্ন জাতের। তাই দুই পরিবার এই প্রেমের সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি। আগামী রবিবার ২৪ শে জ্যৈষ্ঠ ছিল সাবিত্রীর বিয়ে। তাই যেমন বিয়ের কার্ড ছাপানো হয়ে গিয়েছিল। তেমনই প্যান্ডেল-ডেকরেটর-খাওয়াদাওয়ার অগ্রিম টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয়ে যায় বিয়ের প্রস্তুতি। কিন্তু এই বিয়েকে মেনে নিতে পারেনি স্কুলছুট হওয়া সাবিত্রী। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা নাগাদ বিয়ের কার্ড নিয়ে সাইকেলে করে বান্ধবীদেরকে নিমন্ত্রণের জন্য ঘর ছাড়েন তিনি। তারপর আর ফেরেননি।
অন্যদিকে, পুরুলিয়া শহরের একটি কারখানায় কাজ করা সৌভিক তার মামাতো ভাইকে মোবাইলে মেসেজ করে জানিয়ে ছিল, “আমাদেরকে আর পাবি না। আমরা জীবন ছেড়ে যাচ্ছি। আমাদেরকে তালতলার জঙ্গলে পাবি। ” ওই দিন সন্ধ্যের আগে ওই বার্তা পেয়ে শৌভিকের পরিবারকে জানিয়েছিল সে। শুরু হয়েছিল খোঁজাখুঁজি। সমগ্র তালতল এলাকা চষেও তাদের পাওয়া যায়নি। পরে জানানো হয়েছিল পুলিশকে। বুধবার ভোর রাতে জঙ্গলের এক প্রান্তে গাছে ঝুলতে দেখা যায়। লাল রঙের লেগিন্স পোড়া ইটের সালোয়ারে ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন সাবিত্রী। আর তার পাশেই সাদা পাজামা ও নীল রঙের টি-শার্টে গলায় গামছা জড়িয়ে সৌভিক। সেই গাছের নিচে সাবিত্রীর সাইকেল ও তাদের চটি। সেখান থেকেই উদ্ধার হওয়া মোবাইলে হোয়াটস্যাপ ও টেক্সট মেসেজে প্রেমের নানান উপাখ্যান। এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে আর সাবিত্রীর বাড়িতে বাঁধা হয়নি প্যান্ডেল। আসেননি আত্মীয়স্বজনরাও। তবে রং করে সাজানো ঘরে শুধুই কান্নার রোল। এখন দুই পরিবারে একরাশ শূন্যতায় তাদের মোবাইলের প্রেমকথা নিয়ে শোকস্তব্ধ।