শিলিগুড়িতে আপাতত জল সরবরাহ স্বাভাবিক, একাধিক ডিপ টিউবওয়েল, পন্ড খনন, রিজার্ভার বসানোর সিদ্ধান্ত
বর্তমান | ০৬ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: আপাতত স্বাভাবিক পানীয় জল পরিষেবা। চারদিন পর বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডেই সরবরাহ করা হয় নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল। এই অবস্থায় মেয়র গৌতম দেবকে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই মেয়র এদিন তিস্তা নদীর উপর নির্ভরশীল জল প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেন। বৈঠকে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একাধিক পন্ড খনন, ডিপ টিউবওয়েল ও রিজার্ভার বসানো সহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত হয় সিকিম। এতেই ভয়াবহ রূপ নেয় তিস্তা নদী। যার প্রভাব পড়ে শিলিগুড়ির জল প্রকল্পে। তিস্তার কাদাজলে ফুলবাড়ি প্লান্ট জলের জোগান কমে যায়। এরজেরে ১ জুন থেকে শহরে তীব্র জলসঙ্কট তৈরি হয়। এখন তিস্তা কিছুটা শান্ত। চারদিন পর এদিন পানীয় জল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। তিস্তা নির্ভর এই প্রকল্পে যেকোনও সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা। এমন আবহে মেয়রকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মেয়র বলেন, বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁকে বিস্তারিতভাবে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও জলসঙ্কট মোকাবিলায় হাল ছাড়তে নারাজ পুরসভা। এদিন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর, সেচদপ্তর, পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পরিষদ দুলাল দত্ত, ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন মেয়র। বৈঠকের পর তিনি বলেন, এদিন শহরের অধিকাংশ জায়গায় নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছেছে। যে জায়গাগুলিতে জল সমস্যা রয়েছে, সেই জায়গাগুলিতে ট্যাঙ্ক পাঠানো হয়েছে। তবে এই সমস্যা মেটাতে বিকল্প কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আটটি ডিপ টিউবওয়েল বসানোর সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। যারমধ্যে সাতটির টেন্ডার হয়েছে। চলতি মাসেই ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডিপ টিউবওয়েলের উদ্বোধন হবে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ডিপ টিউবওয়েলের আয়রনের মাত্রা কমানোর চেষ্টা চলছে। নতুন করে আরও তিনটি ডিপ টিউবওয়েল বসানো, ১১টি ওভারহেড রির্জাভার তৈরি এবং একাধিক পন্ড খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ফুলবাড়ি প্লান্টের জমিতে একটি পন্ড তৈরির শিলান্যাসও হয়েছে। চলতি মাসে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মেয়র বলেন, সেচদপ্তর সংশ্লিষ্ট পন্ডের আয়তন কমিয়ে গভীরতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। যারজেরে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন করা হচ্ছে। ঠিকাদার সংস্থাকে প্রকল্পের কাজে জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শেষ হবে। এরবাইরে পুরসভার ৩৫টি ট্যাঙ্ক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পিএইচই’র ট্যাঙ্ক, জলের পাউচ তৈরির মেশিন প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
এদিনের বৈঠকে তিস্তা নদী নির্ভর মেগা জল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়। মেয়র বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ চলছে। তিস্তার অপরিস্রুত জল ফুলবাড়ি প্লান্টে নিতে পাইপ বসানো হচ্ছে। এজন্য বনদপ্তরকে আলিপুরদুয়ারে জমি দেওয়া হয়েছে। গজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজের গাইড বাঁধ থেকে ৭৫ মিটার দূরে ইনটেক ওয়েল তৈরির জন্য সার্ভে চলছে। তা করছে যাবদপুর বিশ্ববিদ্যালয়। শীঘ্র বিষয়টি নিয়ে কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক করা হবে।