সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার ও নাগরাকাটা: সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া উত্তরবঙ্গ সফরে এসে বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলার ক্রান্তি ব্লকে আসেন। তিস্তার পাড়ে চ্যাংমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহেববাড়ি এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের অভাব অভিযোগ শোনেন। কয়েকজন সেচদপ্তর ও ব্লক প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিতেই মন্ত্রী উপস্থিত বিডিও থেকে শুরু করে তাঁর দপ্তরের অফিসার এবং ইঞ্জিনিয়ারদের ধমক দেন। এমনকী বিডিও’কে বুঝিয়ে দিয়ে যান কীভাবে কাজ করতে হবে। গ্রামে জল ঢোকায় সাহেববাড়ির তিস্তা বাঁধের উপরে ৭৮টি দুর্গত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
অন্যদিকে, মন্ত্রী এদিনই আলিপুরদুয়ারে বৈঠক করে জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ারে এগ্রি ইরিগেশন ও মেকানিক্যাল দপ্তরের ডিভিশন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য। সিকিমে অবিরাম বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সাহেববাড়ির ৭৮টি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সকলের অস্থায়ী ঠিকানা এখন তিস্তার বাঁধ। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এদিন এলাকা পরিদর্শন করেন সেচমন্ত্রী। বাঁধ সংক্রান্ত কাজকর্ম খতিয়ে দেখেন তিনি। তবে কাজের ঢিলেমি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় এই অব্যবস্থা বলে মনে করেন তিনি। কাজের গতি নিয়ে সকলের সামনেই নিজের দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার, বিডিও সহ অফিসারদের ধমক দেন। কাজের গাফিলতির কারণে ভবিষ্যতে বড় বিপদের আশঙ্কাও প্রকাশ করেন মানসবাবু। এদিকে, মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে এলাকার মানুষ তাঁদের সমস্যার কথা জানান। দীর্ঘদিন ধরে জল নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল, রাস্তাঘাটও চলাচলের অযোগ্য বলে তাঁরা দাবি করেন। মন্ত্রী বলেন, সবটাই দেখা হচ্ছে। পরিদর্শনের সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী বুলুচিক বরাইক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মন সহ অন্যরা।
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি থেকে ১১ বছর আগে ভাগ হয়ে নয়া জেলা আলিপুরদুয়ার হলেও আজও রাজ্য সরকারের এগ্রি ইরিগেশন ও এগ্রি মেকানিক্যাল, এই দুই দপ্তরের আলিপুরদুয়ার ডিভিশন হয়নি। এই দুই দপ্তরের কাজ হচ্ছে সাবেক জলপাইগুড়ি ডিভিশন থেকে। তবে শীঘ্রই এই দুই দপ্তরের ডিভিশন পেতে চলেছে আলিপুরদুয়ার, জানিয়েছেন বিভাগীয় মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। কারণ, এখন দুই দপ্তরের কাজের জন্য ১১০ কিমি দূরে জলপাইগুড়ি যেতে হয়। আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের কৃষি, সেচ ও সমবায় কর্মাধ্যক্ষ অনুপ দাস জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ওই দুই দপ্তরের সাব ডিভিশন অফিস আলিপুরদুয়ারে আছে। কিন্তু ডিভিশন অফিস না থাকায় কাজে গতি আসছে না। কৃষি সেচ ও কৃষকদের যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম সরবরাহের কাজে আশানুরূপ গতি নেই। সেচমন্ত্রী দুই দপ্তরের আলিপুরদুয়ার ডিভিশন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এগ্রি ইরিগেশন দপ্তরের জলপাইগুড়ি ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাজা ঘোষ বলেন, দুই জেলায় দু’টি জেলা পরিষদ। দপ্তরের কাজে দুই জেলাই আমাকে যেতে হচ্ছে। দুই জেলাশাসকের মিটিংয়েও থাকতে হয়। দুই জেলার কাজ সামাল দিতে গিয়ে জেরবার হচ্ছি। তবে সমস্যা হলেও সরকারি কাজের দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে। এগ্রি মেকানিক্যাল দপ্তরের জলপাইগুড়ি ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত বর্গী বলেন, জলপাইগুড়ি সহ আমাকে তো আবার দপ্তরের কাজে চারটি জেলায় যেতে হয়। আলিপুরদুয়ার আলাদা ডিভিশন হলে সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে। তাতে দপ্তরের পরিষেবা আরও ত্বরান্বিত হবে।