• সিকিমের বিপর্যয়ে বেপরোয়া তিস্তা, নদীপাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদে রাখাই চ্যালেঞ্জ: মানস ভুঁইয়া
    বর্তমান | ০৬ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: সিকিমের বিপর্যয়ে বেপরোয়া তিস্তা। পাহাড় থেকে বিপুল জলরাশি ধেয়ে আসছে সমতলে। এই পরিস্থিতিতে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের নিরাপদে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়িতে এসে এমনটাই বললেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নদী ভাঙন ও বাঁধ মেরামতির কাজ খতিয়ে দেখে এদিন জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসে প্রশাসনের আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ছিলেন রাজ্যের কৃষিসচিব ওঙ্কার সিং মিনা। 

    বৈঠক শেষে সেচমন্ত্রী বলেন, সিকিমে লাগাতার বিপর্যয়ে তিস্তা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঘন ঘন গতিপথ পরিবর্তন করছে নদী। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি আমরা। নদীপাড়ের বাসিন্দাদের যথাসম্ভব নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিরা সবাই মিলে এ কাজ করছেন। তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাদের সুরক্ষাই আমাদের কাছে প্রাধান্য। 

    বেপরোয়া তিস্তাকে বাগে আনতে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য। ‘নো কস্ট টু দ্য স্টেট’ অর্থাৎ রাজ্যের কোনও খরচ ছাড়াই নদীবক্ষ খনন করা হবে জানিয়ে এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে ছাড়েননি মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ড্রেজিং, নদী ভাঙন রুখতে কিংবা নদীবাঁধ দেওয়ার কাজে কেন্দ্রের তরফে এক টাকাও দেওয়া হয়নি। ওরা বাংলাকে কোনও টাকা দেবে না, এটা আসলে ওদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। 

    তবে রাজ্যের উদ্যোগেই উত্তরবঙ্গজুড়ে নদী ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ তৈরি ও মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান তিনি। তিস্তার পাশাপাশি জলপাইগুড়ি শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া করলা, গদাধর ও ধরধরা নদীবক্ষ খনন নিয়েও রাজ্য ভাবছে বলে জানান তিনি। 

    তিস্তার জলে ইতিমধ্যেই প্লাবিত ক্রান্তির চ্যাংমারি পঞ্চায়েতের পশ্চিম দলাইগাঁও গ্রামের ৭৮টি পরিবার। ঘর ছেড়ে তারা বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। ডুয়ার্সের টটগাঁও গ্রামটিও তিস্তার গর্ভে তলিয়ে যেতে বসেছে। ধূপগুড়িতে জলঢাকা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। বানারহাটের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হাতিনালার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ভুটানের জলে ফি বছর হাতিনালা প্লাবিত হয়। সেচদপ্তর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে। এদিনের বৈঠকে প্রতিটি ইস্যু নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানান সেচমন্ত্রী। তিনি বলেন, দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। যেখানে ভাঙন রুখে দেওয়া সম্ভব, জরুরি ভিত্তিতে সেখানে কাজ হবে। কিন্তু যেখানে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, সেখান থেকে মানুষজনকে সরিয়ে আনতে হবে। প্রশাসনের আধিকারিকরা বিষয়টি দেখছেন। কোথায়, কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান সেচমন্ত্রী। তিনি বলেন, তিস্তার চরে দীর্ঘদিন ধরে বহু মানুষ ঘরবাড়ি বানিয়েছে। অনেকে চাষ করছেন। আমরা বারবার তাঁদের সরে আসতে বলছি। কেউ কেউ নদীর চর থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু এখনও অনেকে তিস্তার চরে রয়ে গিয়েছেন। নদীর যা পরিস্থিতি তাতে যে কোনও সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে। সেজন্য তিস্তার চর থেকে বাসিন্দাদের সরে আসতে বলছি আমরা। 
  • Link to this news (বর্তমান)