দীপন ঘোষাল, রানাঘাট : ‘আমরা মহিলা সমিতি থেকে এসেছি...।’ জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলিতে গজিয়ে ওঠা একাধিক রেজিস্ট্রেশনবিহীন স্বঘোষিত মহিলা সমিতির এহেন উৎপাতে অতিষ্ঠ আমজনতা। বিভিন্নভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিচারাধীন মামলায় অভিযুক্তদের থেকে রীতিমত তোলাবাজি চালাচ্ছে সমিতিগুলি। কখনও আবার টাকা আদায় করতে না পেরে মারধরের অভিযোগও উঠছে। সম্প্রতি এরকমই একাধিক রিপোর্ট পেয়েছে পুলিসও। তদন্তে প্রায় হাফ ডজন সমিতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলির বিরুদ্ধে নেওয়া হতে পারে কঠোর আইনি পদক্ষেপ।
সূত্রের খবর, নদীয়ার উত্তর থেকে দক্ষিণপ্রান্তের একাধিক জায়গায় গত কয়েক বছরে গজিয়ে উঠেছে বেশ কিছু স্বঘোষিত মহিলা সমিতি। যারা নাকি নারী অধিকার রক্ষায় গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে কাজ করে বলে দাবি। এদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু সমিতির রেজিস্ট্রেশন থাকলেও অধিকাংশেরই নেই। মূলত বিভিন্ন বিচারাধীন মামলায় হস্তক্ষেপ করে অভিযুক্তকে চাপ দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ই তাদের মূল লক্ষ্য। শুধু তাই নয়, পুলিস এবং প্রশাসন নাকি তাদের হাতের মুঠোয় বলেও প্রকাশ্যেই দাবি করছে সেই সমিতিগুলি। কৃষ্ণনগর এবং রানাঘাট উভয় পুলিস ও জেলাতেই এই ধরনের বেআইনি মহিলা সমিতির সক্রিয়তা নজরে এসেছে পুলিসের। কোতোয়ালি হোক অথবা হাঁসখালি, একাধিক থানায় অভিযোগও হয়েছে সমিতিগুলির তোলাবাজি এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে।
রানাঘাট জেলা পুলিস সূত্রের খবর, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে ‘সীমাদি’ অথবা ‘টুনিদি’ নামধারী একাধিক মহিলা সমিতির নাম উঠে এসেছে। সম্প্রতি, এরকমই এক অনুমোদনহীন মহিলা সমিতির অফিসের খোঁজ মেলে হাঁসখালি থানার বগুলাতে। পুলিসের তরফে ইতিমধ্যে এটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার কৃষ্ণনগর জেলা পুলিসের কোতোয়ালি থানাতেও সোমবার এরকমই এক ‘স্বঘোষিত’ মহিলা সমিতির বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলায় হস্তক্ষেপ এবং অত্যাচারের অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই এফআইআর করেছে কোতোয়ালি থানা। পুলিস জানাচ্ছে, অধিকাংশ সময়তেই এই সমিতিগুলির সদস্যরা নিজেদের সঙ্গে প্রশাসনের অবিচ্ছেদ্য যোগ রয়েছে বলে দাবি করে। ফলে প্রতারিতরা থানায় আসার সাহস দেখান না। বিষয়টির বাড়বাড়ন্ত এতটাই যে, আসন্ন ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিং কমিটিতে সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথাও রয়েছে।
রানাঘাট জেলা পুলিসের অতিরিক্ত সুপার লাল্টু হালদার বলেন, ‘বেশ কিছু মহিলা সমিতির গতিবিধির উপর আমরা নজর রাখছি। বিচারাধীন মামলায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার একমাত্র বিচার বিভাগ ছাড়া আর কারও নেই। মূলত টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিয়ে অত্যাচার করা হচ্ছে কিছু মানুষের উপর। আমরা সাবধান করছি, এই সমস্ত স্বঘোষিত মহিলা সমিতিকে। যদি তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আমরা পাই, তা হলে কিন্তু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’