• জলঙ্গির পাড়ে দেদার গাছ নিধন, কৃষ্ণনগর শহরে প্রতিবাদ স্থানীয়দের
    বর্তমান | ০৬ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগর শহরে জলঙ্গি নদীর পাড় থেকে দেদার কাটা হচ্ছে গাছ। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদতে সক্রিয় ‘গাছ মাফিয়া’-রা। অনুমতি ছাড়াই দিনেদুপুরে গাছ কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। শহরের ঘূর্ণি সংলগ্ন এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বাড়ছে। যা নিয়ে সরব স্থানীয়রা। ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে নদীর বাস্তুতন্ত্রে খারাপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।‌ অবৈধভাবে কাটা গাছ চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তার ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত জমি মাফিয়ারাও। প্রশাসনের নাকের ডগাতেই মোটা টাকা লুটছে তারা। 

    কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাস বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। কেউ অন্যায় ভাবে গাছ কাটলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জলঙ্গি নদী ও পার্শ্ববর্তী এলাকা হল কৃষ্ণনগর শহরের প্রাণকেন্দ্র। 

    কয়েকদিন আগেই কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির জলঙ্গি নদীর পাড়ে গাছ কাটা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা সেই গাছ কাটা আটকে দেন। স্থানীয়রা রুখে দাঁড়াতেই গাছের গুড়ি ফেলে রেখে পালায় মাফিয়ারা। জলঙ্গির পাড়ের গাছ এইভাবে কাটার পিছনের বড় ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে স্থানীয়দের অনুমান। কে বা কারা এই গাছা কাটাচ্ছে তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে এর পিছনে ক্ষমতাশালী লোকজনের মদত রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। গাছ কেটে সাফ করার পর ধাপে ধাপে জলঙ্গির পাড়ের জমি অবৈধভাবে দখল করতে চাইছে মাফিয়ারা। এমনটাই আশঙ্কা করছেন এলাকার লোকজন। 

    এই নিয়ে ঘূর্ণি এলাকার স্যাকরা পাড়া, কুমোর পাড়া ও জগবন্ধু লেনের স্থানীয় বাসিন্দারা কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন এবং জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁদের দাবি, জলঙ্গি নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় বন ভূমি, জঙ্গল, মন্দির, খেলার মাঠ রয়েছে। নদীর পারের প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোরম। গ্রামবাসীদের কথায়, আগে এই জমি নদী গর্ভে ছিল। তবে পলি জমে এবং নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে তা স্থলভূমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে বহু গাছ রয়েছে। যা নদীর পারের জমিকে ধরে রাখে। কিন্তু সেখানেই সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কিছু লোকজন নির্বিচারে গাছ কাটছে। যা দেখে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেন।‌ তখন গাছ যাঁরা কাটছিলেন তাঁরা জানান, এটা তাঁদের জমি। তাই তাঁরা গাছ কাটছেন, ওই জমি তাঁরা বিক্রি করতে চান। কিন্তু প্রশ্ন, নদীর চর কীভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন হতে পারে। সচরাচর নদীর চর খাসজমি হিসেবে ধরা হয়। প্রশাসনকে লেখা চিঠিতেই স্থানীয়রা পরিবেশ, বনভূমি ও জলঙ্গি নদী রক্ষার আর্জি জানান। 

    স্থানীয় বাসিন্দা নিতুরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, একদল জমি মাফিয়া নদীরের পারের গাছপালা নির্বিচারে কেটে যাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য, নদীর পারের জমিকে অবৈধভাবে বিক্রি করা। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীতেও অভিযোগ করেছি। 

    পরিবেশবিদদের মতে, নদীর পাড়ের এই গাছপালা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি ভূমিক্ষয় রোধ করে, পাড়কে শক্ত করে ধরে রাখে এবং গোটা বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করে। এভাবে গাছ কেটে ফেলার ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হতে পারে, মাটি ক্ষয় হতে পারে এবং নদী ভাঙনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)