নিজস্ব প্রতিনিধি, বরাবাজার: পরিবেশ সুরক্ষাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুরুলিয়া জেলার বরাবাজারে রমরমিয়ে চলছে পাথর ক্রাশার। অনেক ক্রাশারই খাতায় কলমে ‘বৈধ’, কিন্তু বৈধ নথি নিয়ে চলছে অবৈধ কারবার। সেই সব ক্র্যাশারের দাপটে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে বাসিন্দাদের। বিপন্ন বন্যপ্রাণও। এনিয়ে প্রশাসনের কাছে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। আন্দোলন, বিক্ষোভও কম হয়নি। তবুও প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ।
বরাবাজার ব্লকের শাঁখারি, সরবেড়িয়া, তালাডি, ধারগ্রাম থেকে শুরু করে একাধিক মৌজায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ক্রাশার। বহু ক্রাশার আবার গড়ে উঠেছে বনদপ্তরের জমি দখল করে। সবমিলিয়ে প্রায় ৫০টির বেশি ক্রাশার রয়েছে। আগে সেইসব ক্রাশারগুলিকে বাঁচিয়ে রাখত বরাবাজারজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক অবৈধ খাদান। বর্তমানে ধারগ্রাম মৌজার একটি ‘বিতর্কিত’ খাদান ক্রাশারগুলিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ওই খাদানের জমি সংক্রান্ত গরমিল রয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে ভূমিদপ্তরে। অভিযোগ হয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতেও।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, খাদান ও ক্রাশারে কর্মরত শ্রমিকদের বিমা থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও অধিকাংশ শ্রমিকদেরই বিমা করানো হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী তাঁদের জন্য সুরক্ষা পোশাকও নেই। পাথরের গুঁড়ো যাতে বাতাসে উড়ে না বেড়ায়, তার ব্যবস্থা করতে হয়। সে সবের বালাই নেই। সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি পর্যন্ত দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। সরবেড়িয়া, তালাডি, ধারগ্রাম এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ক্রাশারগুলি থেকে যেভাবে যেভাবে ধুলো ওড়ে, তাতে এলাকায় বাস করা যায় না। তার উপর গ্রামের রাস্তা দিয়ে মুহুর্মুহু পাথর বোঝাই ডাম্পার চলছে। রাস্তার তো দফারফা হয়ে গিয়েছে আগেই। এখন সেই রাস্তার ধুলোতেও জনজীবন অতিষ্ঠ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিজেদের কষ্টের কথা তাঁরা প্রশাসনের সব মহলেই বলেছেন। কিন্তু কেউই কথা কানে তোলেন না। বেশি বলতে গেলে শুনতে হয়েছে হুমকি।
বরাবাজারের ক্রাশারগুলির জমি সংক্রান্ত বিতর্কও রয়েছে প্রচুর। অভিযোগ, বহু ক্রাশারই বনদপ্তরের জমি দখল করে গড়ে উঠেছে। শাঁখারি, সরবেড়িয়া, তালাডি, ধারগ্রাম সহ প্রতি মৌজাতেই কয়েকশ একর বনভূমি রয়েছে। কিন্তু বনদপ্তর কোনও সময়ই এই সব জমিগুলোকে নিজেদের আওতায় আনার চেষ্টা করেনি। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছে অবৈধ পাথর কারবারিরা। এক সময়ে জমি যে বনদপ্তরের নামে নোটিফায়েড ছিল, সেইসব জমির মালিকানা এবং চরিত্র বদল হয়ে গিয়েছে রাতারাতি। যা ১৯৯৬ সালের গোদাবর্মন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আদেশের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, বনভূমির উপর এই ধরনের অবৈধ কাজ ১৯৮০ সালের বনসংরক্ষণ আইনের সম্পূর্ণ বিরোধী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এইসব অবৈধ কারবারে ভূমিদপ্তর, বনদপ্তর ও প্রশাসনের এক শ্রেণির আধিকারিকদের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ।
বরাবাজারের রেঞ্জার হীরক সিংহ বলেন, বনদপ্তরের জমিতে আগে অনেক অবৈধ খাদান ছিল। সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। আর বনদপ্তরের জমিতে পাথর ক্রাশার চলছে বলে খবর নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’ বরাবাজারে বিএলএলআরও সুদর্শন অধিকারী বলেন, ‘ক্রাশারের পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র আমরা দিই না। সেই ব্যাপারে বলতে পারব না। তবে যেসব জমির রেকর্ড বদলে গিয়েছে, তা সংশোধনের কাজ চলছে।’ -নিজস্ব চিত্র