নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়ি ফিরেছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। যা দেখে মুখে চওড়া হাসি কালীগঞ্জ বিধানসভার তৃণমূলের নেতাদের। কারণ, লকডাউনের সময় কেন্দ্র সরকারের উপেক্ষার ক্ষত আজও দগদগ করছে পরিযায়ী শ্রমিকদের মনে। আর সেটাই ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সে ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকদের বড় অংশের ভোট তৃণমূলের দিকেই যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটে ভাগ বসাতে পারে বাম-কংগ্রেসও। তবে অতীতের ক্ষত মেরামত করে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোট টানা বিজেপির পক্ষে কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কালীগঞ্জ বিধানসভায় সংখ্যালঘু ভোটার বেশি। যার জন্য এই কেন্দ্র তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই বিধানসভা এলাকার বহু সংখ্যালঘু মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করতে যান। সরকারি খাতায় এই কেন্দ্রের ১২ হাজার ৬০০ ভোটারের নাম পরিযায়ী শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে। বিধানসভা ভোটের নিরিখে এই সংখ্যা কম নয়। যদিও পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা আরও বেশি বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। ঈদের আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার প্রবণতায় স্বস্তি শাসক দলে। কালীগঞ্জ বিধানসভার পলাশী, বড়চাঁদঘর হাটগাছা সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ কেরল, বেঙ্গালুরু, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান সহ বিভিন্ন রাজ্যে কাজে যায়।
কোভিডের সময়ে চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের। কেন্দ্র সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনের কারণে বাড়ি ফিরতে গিয়ে হয়রান হতে হয়েছিল। তখন কেন্দ্র সরকারের সাহায্য তো দূরের কথা, সহানুভূতি পর্যন্ত জোটেনি। সেই উপেক্ষা আজও ভুলতে পারেননি পরিযায়ী শ্রমিকরা। আর তা যদি ভোট বাক্সে প্রভাব ফেলে তবে গেরুয়া শিবির বিপদে পড়বে। আসন্ন উপনির্বাচনে কাজে পরিযায়ী শ্রমিকদের সেই মানসিকতাই তুরুপের তাস হতে পারে তৃণমূলের। কালীগঞ্জের পরিযায়ী শ্রমিক দীপক হালদার বলেন, সেসব দিনের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কীভাবে বাড়ি ফিরেছিলাম তা আমরাই জানি। রাতের পর রাত অভুক্ত অবস্থায় কেটেছিল। পলাশীর পরিযায়ী শ্রমিক জামালউদ্দিন শেখ বলেন, তখন আমি হায়দরাবাদে কাজ করছি। হঠাৎ শুনলাম সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনওরকমে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কখনও হেঁটে, আবার কখনও লরিতে চেপে ফিরতে হয়েছিল। সেসব দিনের কথা আমরা ভুলিনি। কেন্দ্র সরকার কোনও সাহায্য করেনি।
কালীগঞ্জ ব্লকের তৃণমূলের সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপেক্ষা করেছে তা নিন্দনীয়। লকডাউনের সময় তাঁদের খুব কষ্ট করে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। আমাদের দলের তরফ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস, তাঁরা এবারও তৃণমূল কংগ্রেসের হাত শক্ত করবেন।
কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, রাজ্যে কাজ নেই বলেই এখানকার মানুষদের অন্য রাজ্যে কাজে যেতে হয়েছে। এটা রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা।
সিপিএম নেতা দেবাশিস আচার্য বলেন, তৃণমূল হোক বা বিজেপি পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। বরং তাদের নিয়ে খারাপ মন্তব্য করেছে। আমরা তাঁদের পাশে ছিলাম।