কথাটাকে ঘোষণা বলাই যেতে পারে। তবে আসলে সেটা ছিল এক ধরনের চ্যালেঞ্জ, কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়া।
২০০৯–এর লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের তদানীন্তন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, তমলুকে তাঁর দলের প্রার্থী লক্ষ্মণ শেঠ হেরে গেলে তাঁর টাকে চুল গজাবে। লক্ষ্মণ শেঠ সে বার হেরেছিলেন, তবে সুভাষের খালি মাথায় চুল গজায়নি।
এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ঝক্কি নয়, মাথায় দেওয়ার তেল প্রস্তুতকারক কোনও কোনও কোম্পানির বিজ্ঞাপনী ঘোষণা এ রকম— ‘চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন? মাত্র দু’ফোঁটা। সপ্তাহে চারদিন লাগান। এক মাসেই মাথা ভর্তি চুল, গ্যারান্টি!’
বিজ্ঞাপনের এমন আকর্ষক ঢক্কানিনাদের ফাঁদে পড়ে সেই তেল কিনে মাথা ভর্তি চুল তো দূর— মাথার এ দিক-ও দিকে যে টুকু চুল অবশিষ্ট ছিল, তা–ও ঝরে গিয়ে গড়ের মাঠ হওয়ার উদাহরণ কম নেই।
এই সমস্যা ফুটে উঠেছিল বলিউডের ‘বালা’ ছবিতে। বালকুমুদ শুক্ল ওরফে বালা (আয়ুষ্মান খুরানা) তাঁর স্বল্পকেশের চিকিৎসা নিয়ে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেয়েছিলেন। টলিউডে ঋত্বিক চক্রবর্তীর ‘টেকো’ ছবিতেও দেখানো হয়েছিল, কী ভাবে অলকেশের মাথা ভর্তি চুল উবে গিয়েছিল তেল লাগানোর পর। তার পর দীর্ঘ আইনি লড়াই!
তবে এ বার আর বালা, অলকেশদের মতো সমস্যায় পড়তে হবে না। এ ধরনের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক কঠোর পদক্ষেপ করার ঘোষণা করেছে। কোনও সংস্থা তার প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য ‘এক মাসেই টাকে চুল গজানো’ বা ‘মাখলেই ফর্সা’ হওয়ার মতো গালভরা বিজ্ঞাপনের ঢাক পেটালে কিংবা যদি দেখা যায়, ওই সামগ্রী ব্যবহারের পর কারও শারীরিক ক্ষতি হয়েছে, তা হলে এক ক্লিকে সরাসরি অভিযোগ পৌঁছে দেওয়া যাবে আয়ুষ মন্ত্রকে। এবং মন্ত্রকের ঘোষণা— এ সব ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপনী চটকে ভুলে কেউ ত্বক টানটান করতে গিয়ে, কেউ আবার ষাট বছর বয়সে ভরা যৌবন ফিরে পাওয়ার বাসনায় কিংবা শ্যামলা রংয়ের কেউ কোনও ক্রিম মেখে ফর্সা হতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন তো বটেই, এমনকী কেউ কেউ শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ও সব জিনিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।
ফর্সা হওয়ার একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ক্রিমের উল্লেখ করে একবার মজাদার মন্তব্য করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার মোহিন্দর অমরনাথ। ২০০৫। ভারতীয় ক্রিকেট টিমের নতুন কোচ নির্বাচন হবে। আবেদন করেছেন তিন জন, যাঁদের অন্যতম মোহিন্দর।
তবে চাউর হয়ে গিয়েছে যে, গ্রেগ চ্যাপেলের দিকে পাল্লা ভারী। সেই সময়েই রসিকতা করে মোহিন্দর জানিয়েছিলেন, তিনি ফর্সা হওয়ার ওই ক্রিম মাখছেন। অর্থাৎ, ওই ক্রিম মেখে যদি তিনি শ্বেতাঙ্গদের মতো ফর্সা হতে পারেন, তা হলে তাঁরও কপাল খুলতে পারে! ওই ক্রিম প্রস্তুতকারক সংস্থা কিন্তু সত্যিই বিজ্ঞাপন দিয়ে দাবি করত যে, সেটা মাখলে ফর্সা হওয়া যায়। নিছকই বিজ্ঞাপনী চমক।
তবে এ সব ক্ষেত্রে কোথায় গেলে, কী ভাবে অভিযোগ জানালে, প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্যার সমাধান হবে, তা নিয়ে এতদিন অনেকটাই ধোঁয়াশা ছিল। সে কথা মাথায় রেখে আয়ুষ মন্ত্রক একটি বিশেষ পোর্টাল বানিয়েছে।
ওই পোর্টালের মাধ্যমে অভিযোগকারী নিজের নাম, ঠিকানা উল্লেখ করে জানাবেন, তিনি কী ভাবে কী রকম সমস্যায় পড়েছেন, সে কথা। এ ব্যাপারে প্রতিটি রাজ্যে থাকবে আয়ুষ মন্ত্রকের এক জন নোডাল অফিসার। তাঁর কাছে সেই অভিযোগ যাবে, তার পর পরবর্তী পদক্ষেপ।
আয়ুষ মন্ত্রকের এক অফিসারের কথায়, ‘পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বিজ্ঞাপনে অসত্য বলে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করা যাবে না। এ সব ক্ষেত্রে কনজ়িউমারের মনস্তত্ত্বের সঙ্গে খেলেন অসাধু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কিংবা চিকিৎসকদের একাংশ। প্রতারক ব্যক্তি কিংবা প্রতারক সংস্থাকে জব্দ করতেই কেন্দ্র ‘আয়ুষ সুরক্ষা’ পোর্টাল চালু করেছে।’
এ বিষয়ে সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন আয়ুর্বেদিক সায়েন্সেস–এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর তুষারকান্তি মণ্ডল বলেন, ‘কেন্দ্র জরুরি পদক্ষেপ করেছে। এ বার সরাসরি ওই পোর্টালের মাধ্যমে অভিযোগ জানানো যাবে, দ্রুত পদক্ষেপও করা যাবে প্রতারকদের বিরুদ্ধে।’