এই সময়: মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলে কী হবে, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ‘আভি দূর হ্যায়’।
অনেকটা সময় ধরে অস্বস্তিকর, ভ্যাপসা গরম। ঘেমেনেয়ে একশা হতে হচ্ছে। তার পর হঠাৎ বৃষ্টি নামছে, সেই সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুতের চমক ও কান ফাটানো বাজ পড়া। গত কয়েক দিন যাবৎ কলকাতা ও আশপাশের এলাকা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে মোটামুটি এটাই চিত্র।
তবে এটা আদৌ বর্ষার বৃষ্টি নয়। জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কলকাতা ও গোটা দক্ষিণবঙ্গে যা বর্ষা নামাবে, সেই দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখন থমকে রয়েছে— দুর্বল মৌসুমি বাতাসের পক্ষে দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করা আপাতত কঠিন বলে জানাচ্ছেন আবহবিদরা।
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা নামার ‘সরকারি তারিখ’ ১৫ জুন। এখনও সেই তারিখ আসতে ৯ দিন দেরি। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের অনেকে যে এখনই বর্ষা আসার আশায় বুক বেঁধেছিলেন, তার কারণ উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকে গিয়েছে ২৯ মে— ‘সরকারি তারিখ’ ৮ জুনের ১০ দিন আগেই। তা হলে দক্ষিণবঙ্গেও নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বর্ষা শুরু হয়ে যাবে, এমনটা ভেবেছিলেন এখানকার মানুষের একটা বড় অংশ। অথচ এখনও পর্যন্ত তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, দেশের পশ্চিম প্রান্তের আরব সাগর এবং পূর্ব প্রান্তের বঙ্গোপসাগর— দু’জায়গাতেই তৈরি হয়েছিল দু’টি শক্তিশালী ‘ওয়েদার সিস্টেম’। তারই প্রভাবে নির্ধারিত ১ জুনের পরিবর্তে ২৪ মে কেরালায় ঢুকে পড়েছিল বর্ষা নামানোর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বাতাস।
আন্দামান সাগরে ১৫ মে-তেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। পরে সমুদ্রে তৈরি শক্তিশালী নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বাতাসের একটি শাখা উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে ঢুকে পড়েছিল উত্তরবঙ্গেও। সেটা ২৯ মে। আর তার পরেই সব চুপচাপ।
একদিকে আরব সাগর এবং অন্য দিকে বঙ্গোপসাগরে তৈরি দু’টি সিস্টেমই উধাও হওয়ার ফলে গতি হারিয়ে একেবারে স্তব্ধ বর্ষার বাতাস। নতুন করে বঙ্গোপসাগরে কোনও ওয়েদার সিস্টেম তৈরি না-হলে মৌসুমি বাতাসের পক্ষে দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করা সমস্যার হয়ে দাঁড়াবে।
তবে মনে করা হচ্ছে, ১০ জুন নাগাদ বঙ্গোসাগরে নতুন করে একটি ওয়েদার সিস্টেম তৈরি হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে তার হাত ধরেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা নামবে। মৌসুমি বাতাসকে এই মুহূর্তে দুর্বল করার নেপথ্যে রয়েছে আরও এক কারিগর— পশ্চিম দিক থেকে এগিয়ে আসা শুকনো এবং গরম হাওয়ার স্রোত।
আবহবিদরা জানাচ্ছেন, রাশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে একটি উচ্চচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছে। তারই প্রভাবে ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হয়ে কয়েক দিন ধরেই গরম হাওয়ার প্রবাহ ঢুকছে ভারতে। ওই হাওয়া দুর্বল করে দিয়েছে মৌসুমি বাতাসকে।
আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘স্কাইমেট’–এর প্রেসিডেন্ট জিপি শর্মা অবশ্য মনে করছেন, কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে খুব ধীর গতিতে হলেও মৌসুমি বাতাসের অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা এখন রয়েছে। তবে সমুদ্রে নতুন সিস্টেমটি তৈরি না-হলে দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ এলাকা-মৌসুমি বায়ুর নাগালের বাইরেই থেকে যাবে। তার আগে পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি, মানে এখন যেটা মাঝেমধ্যে হচ্ছে, সেই প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি টুকুই দক্ষিণবঙ্গের প্রাপ্তি।