সাদা পোশাকের চোর! PHE-র পাইপ বদলের নামে দেদার চুরি শাসনে, ধৃত ৩
প্রতিদিন | ০৬ জুন ২০২৫
অর্ণব দাস, বারাসত: সাদা পোশাকে সাধারণত পুলিশ ঘুরে বেড়ায় নজরদারি জন্য। কিন্তু সাদা পোশাকে চুরি! এমনও হয়? শুনে চমকে উঠলেও এটাই সত্যি। এমন আজব ঘটনাই ঘটেছে বারাসতের শাসনে। সরকারি কাজের ঠিকাদারি সংস্থার হয়ে পিএইচই’র পাইপ অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার বরাত দেওয়া হত ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিকে। টাকার বিনিময়ে সেই সংস্থা দিনেদুপুরে, সবার চোখের সামনে জলের এই পাইপ লোডিং-আনলোডিং করত। সংস্থার কর্মীরা জানতেই পারত না, তাঁরা চুরিতে সহযোগিতা করছে। তবে চক্রের এক-দু’জন গোটা প্রক্রিয়ার সবসময় সশরীরে উপস্থিত থাকত। এরপর বিক্রয় স্থলে পিএইচিই-র পাইপ আনলোডিং করানোর পরই চুরির মোটা টাকা কামিয়ে নিত এই চক্র। এই ঘটনার পর্দা ফাঁস হতেই বারাসতের তিন বাসিন্দা গ্রেপ্তার হল শাসন থানার পুলিশের হাতে।
জানা যাচ্ছে, চক্রের কাজ ছিল প্রথমে রেইকি করে কোথায় দীর্ঘদিন পিএইচই-র পাইপ পড়ে রয়েছে, তা খুঁজে বার করা ও ক্রেতা ঠিক করা। তারপর ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির মাধ্যমে লোহার পাইপ ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই কায়দাতেই শাসনের সন্ডালিয়া এলাকায় একশোটির বেশি পিএইচই’র জলের পাইপ চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে। যার আনুমানিক মূল্য ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা। তদন্তে নেমে ফাঁদ পেতে গত মে মাসের মাঝামাঝিতে বারাসতের বাসিন্দা বছর একত্রিশের রাজু ঘোষ ও সঞ্জীব রাহাকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে শাসন থানার পুলিশ।
ধৃতদের দায়িত্ব ছিল চক্রের হয়ে পাইপ লোডিং-আনলোডিং তদারকি করা। তাদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে অভিনব কায়দায় এই সাদা পোশাকে চুরির পরিকল্পনা জানতে পেরে তাজ্জব হয়ে যান দুঁদে পুলিশ কর্তারা। জেরায় দুই ধৃতর থেকেই জানা যায়, কুমার অভিজিত নামে বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তির নাম। তাকেও গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে শাসন থানার পুলিশ। তাঁর বাড়ি হাওড়ায়, ভাড়ায় বারাসতে থাকত সে। অভিজিত মূলত দূর থেকে ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির ঠিক করে চুরির মাল লোডিং করিয়ে বিক্রি স্থলে আনলোডিং করাতো। তাঁর থেকে চুরির মোটা অঙ্কের টাকা উদ্ধার হয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর।
মূলত কলকাতা লাগোয়া শহরতলি এলাকায় এই কায়দায় চুরির চক্র বেশি সক্রিয় ছিল বলেই প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের। তবে এখনও অধরা চক্রের পান্ডা-সহ আরও অনেকে। এনিয়ে বারাসাত জেলা পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খারিয়া জানিয়েছেন, “এটি একটি সংগঠিত ক্রাইম। তদন্ত চলছে। তাই বেশি কিছু বলা সম্ভব হয়। চক্রের মাথা-সহ বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”