বাংলাদেশি ভূখণ্ডে নিজে থেকে চলে যাননি ভারতীয় জওয়ান! বিএসএফ বলল: অপহরণ করা হয়েছিল তাঁকে
আনন্দবাজার | ০৬ জুন ২০২৫
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নিজে থেকে চলে যাননি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র জওয়ান, বরং তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল! ওই জওয়ানকে ভারতে ফিরিয়ে আনার পরে এমনটাই জানিয়েছে বিএসএফ।
বিএসএফের সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং-এর পরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ইতিমধ্যে ফিরিয়ে দিয়েছে ভারতীয় জওয়ানকে। বিজিবি দাবি করেছিল, ওই ভারতীয় জওয়ান আন্তর্জাতিক সীমান্ত লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছিলেন। এর পরে বাংলাদেশি জনতা ওই বিএসএফ জওয়ানকে ধরে ফেলেন এবং বিজিবির হাতে তুলে দেন। তবে বিএসএফের তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে, অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই জওয়ানকে।
ঘটনাটি মুর্শিদাবাদের সুতি থানার অন্তর্গত নুরপুর এলাকার। সেখানে বিএসএফের ৭১ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওই জওয়ান। বুধবার বিজিবি তাঁকে আটক করেছিল। প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে ওই জওয়ানকে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের তরফে জানানো হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় বাংলাদেশ থেকে প্রথমে দু’জন ব্যক্তি গবাদি পশু নিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের বাধা দেন ঘটনাস্থলে কর্মরত বিএসএফ জওয়ান।
ওই সময় পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, জওয়ানের হাতে আধুনিক অস্ত্র থাকলেও প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের প্রতি মানবিক থাকেন তিনি। দুষ্কৃতীদের প্ররোচনা সত্বেও অস্ত্র ব্যবহার করেনি জওয়ান। সেই সুযোগে দুষ্কৃতীরা কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে ২৫-৩০ জনের জমায়েত করে ফেলে। এর পরে ওই জওয়ান কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে অপহরণ করা হয় বলে জানিয়েছে বিএসএফ। পরে খবর পেয়ে অপহৃত জওয়ানকে উদ্ধার করে বিজিবি।
বাংলাদেশি বাহিনীর তরফে জওয়ানের বিষয়ে জানানো হয় বিএসএফকে। এর পরে তৎপরতা শুরু হয় বিএসএফেরও। সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, জওয়ানকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক এবং বিজিবির সঙ্গে কথা বলেন বিএসএফের শীর্ষ কর্তারা। বিজিবি ও বিএসএফের কর্মকর্তাদের মধ্যে দীর্ঘ কথাবার্তার পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয় জওয়ানকে৷ তাঁকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে এনেছে বিএসএফ৷
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি নীলোৎপল পাণ্ডে বলেন, “যেটা হয়েছে, সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়। অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতী এবং নাগরিকেরা আমাদের জওয়ানকে অপহরণ করে। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা চিন্তা করে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী অনেক নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলেছি, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে বাহিনী কতটুকু নমনীয় ও মানবিক মনোভাব দেখাবে, সেটা ভবিষ্যতে ভেবে দেখা হবে।”
সীমান্ত উন্মুক্ত হওয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন মুর্শিদাবাদের নুরপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ৷ ওসমান আলি নামে নুরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, “বাংলাদেশিরা এ পারে এসে আমাদের ফসল নষ্ট করে দিয়ে যায়। সীমান্তে কাঁটাতার থাকলে সব দিক থেকেই সমস্যা কমত। বিএসএফের উচিত অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।” ঘটনা প্রসঙ্গে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার অমিতকুমার সাউ বলেন, “সুতি থানা এলাকার সীমান্তে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। বিএসএফের আধিকারিকেরা বিষয়টি দেখেছেন।”