বিরল রোগে আক্রান্ত ৬ মাসের শিশুকন্যা অংশিকা মণ্ডল। স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি টাইপ ওয়ান (এসএমএ-১) নামের অসুখটা ধরা পড়েছে মাস তিনেক আগে। ১৪০ কোটির ভারতে এমন রোগী ১০০ জনও নয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, আয়ু আর বছর দুয়েক।
একমাত্র উপায়, সুইস বহুজাতিক সংস্থার একটি ওষুধ। দুনিয়ায় আর কোনও চিকিৎসা নেই এ ছাড়া। কিন্তু ওষুধটির দাম প্রায় ৯ কোটি টাকা। নিরুপায় মা-বাবা বিটপী ও অনিমেষ তাই ক্রাউড ফান্ডিংয়ের আশ্রয় নিয়েছেন। উঠেছে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা। আগামী এক বছরের মধ্যে তুলতে হবে আরও অন্তত ৮.৮০ কোটি টাকা।
জিনঘটিত দুরারোগ্য অসুখ এসএমএ-তে আক্রান্ত একরত্তি মেয়েকে বাঁচাতে মরিয়া মা–বাবা অনলাইনে ক্যাম্পেনের পাশাপাশি ক্রাউড ফান্ডিংয়ে (https://www.impactguru.com/fundraiser/help-anshika-mandal) গতি আনতে চাইছেন। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তাঁদের যুদ্ধটা শুধু অসুখের বিরুদ্ধে নয়, সময়ের সঙ্গেও।
অনিমেষ জানাচ্ছেন, আপাতত এসএমএ-র ক্রমাবনতি ঠেকাতে ‘রিসডিপ্লাম’ নামে একটি ওষুধ চলছে অংশিকার। যার এক-একটি ফাইলের দাম ৬.২০ লক্ষ টাকা। অবশ্য ওই ওষুধের প্রস্তুতকারক সুইস বহুজাতিক সংস্থা রোসে ভর্তুকি দেয় ওষুধটিতে।
তাদের ‘ব্লু ট্রি প্রোগ্রাম’-এর আওতায় দু’টি ফাইল কিনলে আরও তিনটি ফাইল বিনামূল্যে মেলে। সেই হিসেবে এক-একটি ফাইলের দাম আপাতত পড়ছে ২.৪৮ লক্ষ টাকা।
কিন্তু এই ওষুধটি দিয়ে কোনও রকমে ঠেকিয়ে রাখা যায় ধারাবাহিক অবনতি। অসুখটা সারাতে দরকার ‘জ়োলজেন্সমা’ নামের মহার্ঘ ওষুধটি। মালদার রতুয়ার সরকারি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক অনিমেষ ও গৃহবধূ বিটপীর লক্ষ্য, আর এক সুইস বহুজাতিক সংস্থা নোভার্টিসের তৈরি সেই ‘জ়োলজেন্সমা’ ওষুধটি কেনার জন্যে ৯ কোটি টাকা জোগাড় করা।
এবং সেটা জোগাড় করতে হবে অংশিকার বয়স দেড় বছর পেরোনোর আগেই। ওষুধটি প্রতিটি রোগীর জন্যে ‘কাস্টমাইজ়ড’ (ব্লাড স্যাম্পেল নিয়ে এক–এক জনের জন্যে এক-এক রকম) তৈরি করতে হয়। এবং সেটি করতেও কয়েক মাস লাগে। আর ওষুধটি প্রয়োগ করতে হয় দু’বছর বয়সের মধ্যেই।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসএমএ অসুখের বহিঃপ্রকাশ ধরা পড়ে মাস ছয়েক বয়সের মধ্যেই। শরীরে সার্ভাইভাল মোটর নিউরন টাইপ ওয়ান বা সংক্ষেপে এসএমএন-১ জিনের গন্ডগোল অথবা অনুপস্থিতিতে শরীরে তৈরি হয় না এসএমএন প্রোটিন।
আর তার অভাবজনিত এই বিরল অসুখে হাত-পা সঞ্চালন, শ্বাসপ্রশ্বাস ও খাবার গেলার মাংসপেশিগুলি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। জিনঘটিত এই অসুখে পেশি সঞ্চালন সংক্রান্ত সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয় মস্তিষ্ক।
এই দুর্বলতা বাড়তে বাড়তে এক সময়ে ফুসফুসের পেশিও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে কার্যত শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়। বিনা চিকিৎসায় এ অসুখে বছর দুয়েকের বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচা মুশকিল।
কিন্তু চিকিৎসার খুব বেশি উপায় নেই। ওনাসেমনোজিন নামে (ব্র্যান্ডনেম জ়োলজেন্সমা) জিন থেরাপির যে একমাত্র ওষুধটি সারা দুনিয়ায় পাওয়া যায়, তার খরচ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা ছিল ২০২১ পর্যন্ত। ২০২২ থেকে ওষুধটির দাম প্রায় অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি টাকা।
যা জোগাড় করাও সাধ্যাতীত গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষে। ওষুধটি আবার তাদেরই দেওয়া যায়, যাদের ওজন ১৩ কিলোগ্রামের কম। অংশিকার ওজন এখনই ৫ কিলোগ্রাম হয়ে গিয়েছে। এই বয়সে ওজন বাড়ে দ্রুত। হাতে বেশি সময় নেই। চিকিৎসায় তাকে সুস্থ করে তুলতে মরিয়া মা-বাবা।