গাছের পরিচর্যায় প্রয়াত মাকে খুঁজে পান উত্তম, বৃক্ষ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা সারাবছরই
বর্তমান | ০৭ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: শুধু ৫ জুন নয়, সারা বছরই তাঁর কাছে পরিবেশ দিবস। গাছ লাগানোর থেকেও বেশি গুরুত্ব দেন বিভিন্ন জায়গায় অবহেলায় পড়ে থাকা গাছগুলিকে বাঁচিয়ে তোলায়। শিলিগুড়ি বিধান মার্কেট এলাকার বাসিন্দা উত্তম চট্টোপাধ্যায় করোনাকাল থেকে নীরবে এই কাজ করে চলেছেন।
বাইকে করে কাঁধে ব্যাগ চাপিয়ে ঘুরে বেড়ান। সেই ব্যাগে গাছের পরিচর্যা করার নানা সরঞ্জাম। রাস্তার ধারে কোথাও কোনও গাছ হেলে পড়ে রয়েছে, জঙ্গল ভরেছে দেখলেই বাইক থামিয়ে নেমে পড়েন উত্তমবাবু। আগাছা সরিয়ে গাছকে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া, মাটিতে হেলে পড়া গাছকেই সোজা করে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিয়ম করে সেখানে সার-মাটি দেওয়া ও জলের ব্যবস্থাও করেন তিনি। এভাবে এখনও পর্যন্ত শিলিগুড়ি শহরে প্রায় এক হাজারেরও বেশি গাছ বাঁচিয়ে তুলেছেন উত্তমবাবু।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন দেখা গিয়েছে শিলিগুড়ির নৌকাঘাট পেরিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে-২’র ধারে জঙ্গলের মধ্যে বসে তিনি গাছের পরিচর্যা করছেন। উত্তমবাবু বলেন, এখানে রাস্তার দু’ধারে নিম, হরিতকি, আম-কাঁঠাল গাছ আমি লাগিয়েছিলাম। বিভিন্ন সময়ে এসে এর পরিচর্চা করি। দেখি, একটি হরিতকি গাছ খাঁচা সহ মাটিতে হেলে পড়েছে, অনেক গাছ আগাছায় ঢেকে যাচ্ছে। আগাছা সরিয়ে হেলে পড়া গাছকে আবার সোজা করে দিয়েছি। এভাবেই বিভিন্ন জায়গায় গাছের পরিচর্যা করে আমি আনন্দ পাই। সমানতালে গাছও লাগাই। অনেকেই গাছ লাগায়। কিন্তু সেই গাছগুলিকে বাঁচিয়ে তোলার ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব রয়েছে।
শিলিগুড়ি শহরের সেভক রোডে ডিভাইডারের মধ্যে থাকা গাছগুলি একসময় মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল। সংবাদমাধ্যমে সে খবরে দেখতে পেয়ে উত্তমবাবু ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাছগুলিকে পরিচর্চা করে আবার সতেজ করে তোলেন। শিলিগুড়ি শহরে রাস্তার ধারে বড় বড় গাছে পেরেক গেঁথে নানা বিজ্ঞাপন লাগানো বন্ধ করতে তিনিই পুরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এটা তাঁর নেশা। উত্তমবাবু বলেন, করোনায় মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই কাজে আরও বেশি করে নিজেকে যুক্ত করে ফেলেছি। গাছ, পরিবেশ আমার মা। এই কাজের মধ্য দিয়ে আমি আমার মাকে খুঁজে পাই।