নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: চাপড়ার দৈয়েরবাজার এলাকায় আইসিডিএস কর্মী খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হল মহিলার ভাইপোকে। ধৃতের নাম রজত দাস। বৃহস্পতিবার রাতে দৈয়েরবাজার এলাকা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার ধৃতকে কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ছ’দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, পিসির কোটি টাকার সম্পত্তি হাতানোর জন্যই শাবল দিয়ে কুপিয়ে রজত খুন করেছে। তবে নিয়মিত সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত রজতের এই কীর্তি দেখে তাজ্জব এলাকাবাসীরা।
গত ৩০ মে সকালে দৈয়েরবাজারের ঢাকাপাড়া এলাকায় এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর অর্ধনগ্ন ও রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। মৃত মহিলার নাম মনজুলা দাস (৫৫)। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মনজুলাদেবীর তিন ভাই ও দুই বোন। তিন ভাই ও এক বোন ইতিপূর্বেই মারা গিয়েছেন। অপর এক বোন শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাঁদের পৈত্রিক সম্পত্তির পরিমাণ কোটি টাকার উপরে। বর্তমান তাঁদের বংশের একমাত্র ছেলে হল রজত। স্বাভাবিকভাবেই মনজুলাদেবী মারা গেলে গোটা সম্পত্তির একমাত্র ওয়ারিশ হতো রজত। বিগত দু-তিন মাস ধরেই পিসিকে ফোন করে হুমকি দিত সে। এমনকী, মাঝেমধ্যেই মারধরও করত পিসিকে। জমি বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে পিসিকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করত সে।
মনজুলাদেবীর দেহ উদ্ধারের পর তদন্ত শুরু করে পুলিস। তাতেই রজতের সঙ্গে খুনের ঘটনার যোগসূত্র উঠে আসে। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার আগের দিন রাতে শ্রীনগরে পেট্রল পাম্পে এসেছিল ওই আইসিডিএস কর্মী। সেখানেই তাঁর স্বামী কাজ করেন। স্বামীকে রাতের খাবার খাইয়ে তিনি দৈয়েরবাজার ফিরে আসেন। রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল বলে ছেলেকে নিয়ে আসেননি। তাঁর ঘরের পিছনের দিকের দরজা খোলাই থাকত। আর সেটা শুধুমাত্র রজত আর তার মা জানত। ওই রাতেই ঘরের মধ্যে ঢুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পিসিকে খুন করে রজত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরদিন সকালে প্রতিদিনের মতো মনজুলাদেবীর সহকর্মীরা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে আসেন। কিন্তু, বহুবার ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়া না পেয়ে তাঁদের মনে সন্দেহ জাগে। এরপর তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের খবর দেন। পরে এলাকার কয়েকজন মিলে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন। ঘরে ঢুকতেই তাঁরা মনজুলাদেবীর দেহ মেঝেতে রক্তাক্ত ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। দেহে ছিল স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন এবং ধস্তাধস্তির প্রমাণ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহটি উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। রজতের এই কাণ্ডকারখানায় তাজ্জব সকলেই। কারণ জলঙ্গী নদী বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম সদস্য তিনি। এমনকী নানা সময় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্যও বিভিন্ন কর্মসূচির সামনের সারিতে দেখা যায় তাঁকে। সমাজ সেবায় নিয়োজিত এক অল্পবয়সী যুবক হিসেবেই তার পরিচয় ছিল। তার সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলে সমাজসেবামূলক কাজের বহু ছবি রয়েছে। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এক আধিকারিক বলেন, বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজ করত ধৃত ওই যুবক। যাতে তাকে কেউ সন্দেহ না করতে পারে। কিন্তু এর আড়ালে পিসির জমি হাতানোর জন্য নানাভাবে তারপর চাপ সৃষ্টি করত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের বিষয়টি স্বীকার করেছে। • নিজস্ব চিত্র