পুলিসকে সমাজ শোধরানোর পাঠ দিচ্ছে মা-বাবা খুনে ধৃত হুমায়ুন
বর্তমান | ০৭ জুন ২০২৫
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: এ যেন ভুতের মুখে রামনাম! বাবা, মা’কে নৃশংসভাবে খুন করার পর অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। উল্টে পুলিসকে মানবিকতার পাঠ দিচ্ছে মেমারির হুমায়ুন কবীর। কিভাবে সমাজ শোধরানো যাবে বা অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের উপায় কি, সেসব নিয়ে তদন্তকারীদের টিপস দিচ্ছে সে। জিএসটি বা আয়কর আদায়ের জন্য কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটাও পুলিসকে বোঝাচ্ছে। মানুষ সচেতন না হওয়ায় ধীরে ধীরে প্রকৃতি শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধনীদের হাতে সব কিছু। গরিবরা কিছু পাচ্ছে না। এ জাতীয় তত্ত্ব খাড়া করে চলেছে সে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার হুমায়ুনকে মেমারি থানায় আনা হয়। পুলিস সাতদিনের হেফাজতে নিয়ে তাকে জেরা করছে। কোনও কিছু জানতে চাওয়া হলে সে নিজের যুক্তি দিয়ে উত্তর দিচ্ছে। কিভাবে সে মা-বাবাকে হত্যা করেছে, সেটাও নিখুঁতভাবে বর্ণনা দিচ্ছে। তার দাবি, গরিবদেরকে যাঁরা সহ্য করতে পারে না, তাঁরা সমাজের শত্রু। মা, বাবাকে গরিবদের জন্য বারবার কাজ করতে বলা হলেও তাঁরা করেননি। সেই কারণেই তাঁদের হত্যা করা হয়েছে বলে সে দাবি করেছে। জেরায় জানিয়েছে, যারা গরিবের শত্রু তাঁদের সকলকেই সে মেরে ফেলতে চায়। সমাজ শোধরানোর জন্য তাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে পুলিস আধিকারিকদের কাছে অনুরোধও করছে। এক আধিকারিক বলেন, হুমায়ুনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। সে দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে যথেষ্ট খোঁজ খবর রাখে। জিএসটির জন্য কিভাবে ছোট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটাও সে অঙ্ক কষে বোঝাচ্ছে। পুলিসের একাংশের দাবি, এই সমস্ত অঙ্ক তার মাথায় ঢুকিয়ে কেউ ফায়দা তুলতে চেয়েছিল কিনা, সেটা দেখা হচ্ছে। সমাজের এক শ্রেণির প্রতি তার চরম ক্ষোভ রয়েছে। সুযোগ পেলে তাদেরকে মারতে সে পিছুপা হতো না। তার মগজ ধোলাই করে অন্য কোনও বড় চক্র তাকে দিয়ে বড় কোনও নাশকতা ঘটনানোর পরিকল্পনা করেছিল কি না সেটাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। কেননা, বাবা-মা’কে খুন করার পর হুমায়ুন বনগাঁয় গিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে চড়াও হয়। সেখানে বেশ কয়েকজনের উপর এলোপাথাড়ি ছুরি চালিয়ে জখম করে। তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয়। পুলিসকে হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। পুলিস জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রথম দিকে তার মেজাজ অন্য রকম ছিল। এখন সে অনেকটাই শান্ত। অদ্ভুত দৃষ্টিতে সে সবার দিকে তাকিয়ে থাকছে। তার মাথায় যে কিছু একটা ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা ওকে দেখলেই মালুম হচ্ছে। বাবা এবং মায়ের কথা বারবার বলা হলেও তার হুমায়ুনের কোনও হেলদোল নেই। অথচ, প্রতিবেশীরা পুলিসকে জানিয়েছেন, হুমায়ুনকে তার বাবা এবং মা ছোট থেকে অত্যন্ত আদরে বড় করেছে। কাজ ছেড়ে দিল্লি থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার পর বাবা এবং মায়ের চিন্তায় রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল। কয়েক মাস খোঁজাখুজির পর বাবা তাকে হিমাচল প্রদেশ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেটাই কাল হল। পুলিস সুপার সায়ক দাস বলেন, হুমায়ুনকে জেরা করে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে।