নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: প্রাক বর্ষার বৃষ্টি শুরু হতেই বাঁকুড়ায় চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। ইতিমধ্যেই জেলায় ৮৪জন ডেঙ্গু আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলার ‘হটস্পট’গুলি আধিকারিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ওই জায়গাগুলি নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া স্বাস্থ্যজেলায় ১৬টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বাঁকুড়ার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) দেবব্রত দাস বলেন, আমাদের আওতায় ১৬টি ব্লক রয়েছে। ওইসব ব্লকের অন্তত একটি করে জায়গাকে আমরা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছি। ওন্দার পুনিশোল, বাঁকুড়া-১ ব্লকের আঁচুরি ছাড়াও খাতড়া মহকুমার হীড়বাঁধ ও রানিবাঁধকে ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব এলাকার জন্য আমরা বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, গতবার জেলায় ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে জেলায় ২৭৬জন সক্রিয় ডেঙ্গু আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কারও আবার বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলিকে হিমশিম খেতে হয়। জেলার মধ্যে পুনিশোল স্বাস্থ্যদপ্তরের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে ফিভার ক্লিনিক শিবির হয়। শিবিরে মোট ৪৮৫জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তারমধ্যে ৭২ জনের রক্তে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যায়। মাত্র একটি গ্রাম বা সংলগ্ন এলাকায় একসঙ্গে এত বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের হদিশ পাওয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় মেদিনীপুর থেকে জোনাল ম্যালেরিয়া অফিসার বাঁকুড়ায় পরিদর্শনে আসেন। তিনি পুনিশোল এলাকা ঘুরে দেখেন। এবারও যাতে ওই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় তারজন্য আমরা আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উপদ্রুত এলাকাগুলিতে আশা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথমে বাড়ি বাড়ি যাবেন। কেউ জ্বরে ভুগছেন কি না, তা তাঁরা খোঁজ নেবেন। পাশাপাশি পঞ্চায়েতের লোকজনও এলাকায় ঘুরবেন। সাধারণত পরিষ্কার জমা জলে ডেঙ্গু মশা ডিম পাড়ে। তা থেকেই লার্ভা জন্মায়। কোথাও জল জমছে কি না, তা পঞ্চায়েত সদস্যরা খতিয়ে দেখবেন। তা নজরে পড়লে ডিম ও লার্ভা যাতে শুরুতেই নষ্ট করা যায়, সেব্যাপারেও স্বাস্থ্যদপ্তর এবং পঞ্চায়েত একযোগে কাজ করবে। এব্যাপারে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির সঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সমন্বয় বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাঁকুড়া পুরসভা ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু বিরোধী অভিযান শুরু করেছে। পুরকর্মীরা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। শহরে দু’জন ডেঙ্গু রোগীর হদিশ পাওয়ার পর পুর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। খোদ পুর চেয়ারম্যান অলকা সেনমজুমদারকে পাত্র থেকে জমা জল নিকাশি নালায় ফেলে দিতে দেখা যায়।