• বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, গ্রেপ্তার মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক
    বর্তমান | ০৭ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক জুনিয়র ডাক্তারের  বিরুদ্ধে। এমনকী ওই তরুণীকে জোর করে পরপর তিনবার গর্ভপাত করানো হয়। পাটুলি মহিলা থানায় বান্ধবীর অভিযোগের পরই পুলিস অভিযুক্ত চিকিৎসক সুলতান ফারুক মণ্ডলকে মেডিক্যাল কলেজের বাইরে থেকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, জোর করে  গর্ভপাত করানো সহ একাধিক ধারায় কেস রুজু হয়েছে। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে মেডিকেল কলেজের ওই জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে অভিযোগকারিনী তরুণীর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচয় হয় ২০২০ সালে। সুলতান ফারুক ওই তরুণীকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠালে, তিনি তা গ্রহণ করেন। দু-একবার কথাবার্তার পর মোবাইল নম্বর আদানপ্রদান হয়। তরুণী ওই জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে প্রণয়ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। জুনিয়র ডাক্তার জানান, তিনি তাঁকে বিয়ে করবেন। আসলে এটি যে নিছকই তাঁর প্রতিশ্রুতি, বুঝতে পারেননি অভিযোগকারিনী। ২০২২ থেকে তাঁরা ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্কে জড়ান। এতে তরুণী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তাঁর দাবি, ভিটামিন ওষুধের সঙ্গে অন্য ওষুধ মিশিয়ে গর্ভস্থ সন্তানকে নষ্ট করতে বাধ্য করেন ওই চিকিৎসক। এরপর দুজনের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়। ২০২৪ আবার একে অপরের কাছাকাছি চলে আসেন। তখনও ঘনিষ্ট সম্পর্কে জড়ালে আবার অন্তঃসত্ত্বা হন তরুণী। এবারও তাঁকে বাধ্য করা হয় গর্ভপাত করাতে। ২০২৫’এর শুরুতে ফের একই ঘটনা ঘটে। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতেও যান। তিনবার গর্ভপাত করানোর হওয়ার পর তরুণী বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। বিভিন্ন অজুহাত খাড়া করে জুনিয়র ডাক্তার এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ। এমনকী মোবাইল ধরাও বন্ধ করে দেন। তারপরই তিনি সুলতান ফারুকের বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারিতে লিখিত অভিযোগ করেন পাটুলি মহিলা থানায়। 

    তদম্তে নেমে পুলিস জানতে পারে, ওই জুনিয়র ডাক্তার মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলেই থাকেন। হস্টেল বা হাসপাতাল থেকে তদন্তকারীরা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চাইছিলেন না। তাঁর গতিবিধি নজর রাখা হচ্ছিল। এর আগে যাদবপুর এলাকায় একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসে অল্পের জন্য গ্রেপ্তারির হাত থেকে বাঁচেন অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার তিনি মেডিক্যাল কলেজের বাইরে বউবাজার এলাকায় আসতেই তাঁকে পাকড়াও করা হয়। ধৃত পুলিসকে জানিয়েছেন, তিনি গর্ভপাত করাননি। তবে তাঁর সঙ্গে যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন। অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তারকে এদিন আদালতে তোলা হলে, তাঁর আইনজীবী সুব্রত সর্দার বলেন, পুলিসের এফআইআরে কোথায় ‘অ্যাবরসন’ শব্দটি নেই। সেখানে মিসক্যারেজ লেখা রয়েছে। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে তরুণীকে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়নি। আর মহিলা বলছেন ভিটামিনের সঙ্গে অন্য ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু ওষুধের স্ট্রিপ কোথায়? আর ২০২২ সাল থেকে ঘটনা হয়ে আসছে। অথচ পুলিস ওই চিকিৎসককে হেফাজতে চাইছে তাঁর পরণের জামাকাপড় পরীক্ষা ও ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবে বলে। এতদিন পরে কীভাবে জামাকাপড় পাওয়া সম্ভব। আর ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের পুনর্নির্মাণের বিষয়টি রীতিমতো হাস্যকর। সুব্রতবাবু তাঁর মক্কেলের জামিন চান। সরকারি আইনজীবী সৌরিন ঘোষাল জামিনের  বিরোধিতা করে বলেন, ওই তরুণীকে যে জোর করে ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে, তার প্রমাণ রয়েছে। মেডিক্যাল নথি বলছে, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার পর ওষুধের প্রভাবেই সন্তান নষ্ট হয়েছে। সওয়াল শেষে বিচারক সুলতান ফারুককে ১১ জুন পর্যন্ত  জেল হেফাজতে পাঠান।   
  • Link to this news (বর্তমান)