• অভিষেক-বার্তার প্রচারে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
    এই সময় | ০৭ জুন ২০২৫
  • এই সময়, পাঁশকুড়া: জাতীয় স্বার্থে তিনি ও তাঁর দল যে সব সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে রয়েছেন, সে কথা বারবারই বলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানের মুখোশ গোটা বিশ্বের সামনে খুলে দিতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়ায় ধারালো ভাষায় তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য তুলে ধরছেন তিনি।

    ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অভিষেক জানান, তিনি ভারতের শাসকদলের সদস্য নন। বিরোধী দলের সাংসদ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেশ আগে, দল পরে। দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নে গোটা ভারত যে একজোট, সে কথা বুঝিয়ে অভিষেক বলেন, ‘আমি বিরোধী দলের সাংসদ।

    শাসকদলের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু এখানে দেশের আগে দল নয়। সব সময়েই দলের স্বার্থের আগে রয়েছে দেশ। সারা বিশ্বের কাছে এই বার্তা তুলে ধরতে চাই।’

    তাঁর সংযোজন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য আছে-থাকবে। কিন্তু দলের স্বার্থের হাজার কদম আগে থাকবে দেশের স্বার্থ।’

    জাকার্তায় অভিষেকের সেই বক্তৃতাকে হাতিয়ার করে এ বার জনসংযোগ শুরু করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ডিজিটাল প্রচারের পাশাপাশি চায়ের দোকান, বাজার-হাট, কোচিং সেন্টারের মতো জায়গায় জোর প্রচার শুরু করেছে টিএমসিপি-র নেতানেত্রীরা।

    তাঁদের দাবি, দলীয় কোনও পতাকা, ব্যানার ছাড়া এই প্রচারে বেশ ভালো সাড়াও মিলছে। কী ভাবে চলছে প্রচার? জানা গিয়েছে, টিএমসিপি-র সদস্যদের নিয়ে খুব ছোট ছোট দল তৈরি করা হয়েছে। তারা চায়ের দোকান, পাড়ার রক, কলেজের সামনে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।

    আর সেই আড্ডাতেই উঠে আসছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভাইরাল’ হওয়া সেই মন্তব্য। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক সদস্যের কথায়, ‘মজাটা কী বলুন তো, কেউ হয়তো তৃণমূলের বিরোধী। কিন্তু দেশপ্রেমের প্রশ্নে অভিষেকের মন্তব্যকে তো অবজ্ঞা করতে পারছেন না। আর এখান থেকেই অনেক নতুন ছেলেমেয়ে উৎসাহিত হচ্ছেন।’

    তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত কুমার রায় এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক গত ২৭ মে একটি দলীয় বৈঠক করেন। সেই বৈঠক থেকেই অভিষেকের ‘দেশ আগে, দল পরে’ মন্তব্য নিয়ে প্রচারের জন্য ছাত্রনেতাদের মাঠে নামার নির্দেশ দেন।

    টিএমসিপি-র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন রাজ্য কমিটির সদস্য আবেদ আলি খান। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ জুন থেকে জেলার ২৪ টি কলেজের সমস্ত ছাত্রছাত্রীর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হচ্ছে প্রচার-বার্তা।

    চায়ের দোকান, বাজার-হাট, কোচিং সেন্টারে ছাত্রনেতারা এ বিষয়ে প্রচার করছেন। প্রচার-বার্তায় অনেক বিষয়ের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিধিত্ব করতে বিদেশে গিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলার সাংসদ দেশকে সবার আগে তুলে ধরেছেন। এমন দেশভক্তি সবার চাই।’

    ডিজিটাল প্রচারের পাশাপাশি মহিষাদল, নিমতৌড়ি, কাঁথি এলাকাতেও জোরকদমে শুরু হয়েছে প্রচার। কলেজের অধ্যাপকদের সঙ্গে দেখা করে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করছেন ছাত্রনেতারা।

    তবে কোনও ক্ষেত্রেই দলের পতাকা ব্যবহার করা হচ্ছে না। দেশভক্তি নিয়ে তৃণমূলকে প্রায়ই আক্রমণ করে বিজেপি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদেশ সফরের পরে বিজেপির মুখ বন্ধ করে দেওয়া গিয়েছে বলেই দাবি করেন ছাত্রনেতারা।

    রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে দেশভক্তিকে হাতিয়ার করে জনসংযোগে শুরু করে দিয়েছে শাসক দল।

    তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি অতনু সামন্ত বলেন, ‘আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশে গিয়ে দেশভক্তি নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সবার অনুসরণ করা উচিত। তিনি দলের আগে দেশকে এগিয়ে রাখার কথা বলেছেন। এ বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরতেই আমাদের এই কর্মসূচি।’

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এবিভিপি সহ-প্রমুখ দিব্যেন্দু সামন্তের বক্তব্য, ‘ছাত্র ও যুব সমাজ তৃণমূলের পাশে নেই। তাদের পাশে পেতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাটক করছেন। তিনি মুখে সন্ত্রাসের বিরোধিতা করছেন আর বাংলায় ওঁর দল সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে।’

    আর এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক জাকির হোসেন মল্লিকের কথায়, ‘তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এই কর্মসূচি আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরনোর এতদিন পরেও কলেজে ভর্তি শুরু হয়নি। তৃণমূলের এই মেকি দেশভক্তির প্রচারে কোনও লাভ হবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)