• ঘুমের ওষুধ, নকল গলা! পুলিশের কাছে কেষ্ট-যুক্তি
    এই সময় | ০৭ জুন ২০২৫
  • এই সময়, বোলপুর: অভিযোগ ওঠার সাতদিনের মাথায় ঘণ্টা দুয়েকের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বৃহস্পতিবারই পড়তে হয়েছে অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টকে। বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদার এবং তাঁর মা–স্ত্রীকে উদ্দেশ করে ফোনে এ ভাবে হুমকি দিলেন কেন কেষ্ট?

    পুলিশ সূত্রের দাবি, পাঁচদিন ‘বেড রেস্টে’র পরে পুলিশের মুখোমুখি হয়ে অনুব্রত যুক্তি খাড়া করেছেন মূলত দু’টি বিষয়কে— এক, ঘুমের ওষুধ এবং দুই, নকল গলা! তিনি তদন্তকারীদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘রাতে আমি ঘুমের ওষুধ খাই। আমি কাউকে গালিগালাজ করিনি। আমার গলা নকল করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’

    অতীতে অনুব্রতর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘কেষ্টর মাথায় অক্সিজেন কম যায়’। গোরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের তলব এড়াতেও একাধিকবার ‘অসুস্থতা’র যুক্তি দিয়েছিলেন কেষ্ট।

    এ বার ঘুমের ওষুধ ও তাঁর গলার নকল করার যুক্তিতে কি সন্তুষ্ট পুলিশ? তদন্তকারীরা এর স্পষ্ট জবাব দেননি। তবে সূত্রের দাবি, তাঁর বয়ান খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

    অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ দিন বিশ্রামের মাঝে কেষ্ট পুলিশের কাছে হাজিরা দেওয়া নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে বার বার আলোচনা করেন। জেলার এক দুঁদে আইনজীবী তাঁকে প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করেন, যেন তিনি আদালতে আগাম জামিনের আবেদন না করেন।

    কারণ, যে ধারায় মামলা করা হয়েছে, তাতে বীরভূম জেলা জজ কোর্টে জামিন নাকচ হয়ে যেতে পারে। তখন আর কিছু করার থাকবে না। তখন অনুব্রত আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, ‘তা হলে বাড়ি বসে থেকে কিছু করা যায় না?’

    কিন্তু কেষ্টকে বোঝানো হয়, পুলিশের কাছে হাজিরা দেওয়াই ভালো। সেই কথা শুনে বিরক্ত অনুব্রত বলে ওঠেন, ‘তোরা তা হলে কী জন্য আছিস? বেশ তা হলে যাব।’

    পরিকল্পনা করেই বৃহস্পতিবার এসডিপিও অফিসে যান অনুব্রত। আর সেখানে গিয়ে ঘুমের ওষুধ এবং গলা নকলের যুক্তি দেন। এর আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা গগন সরকারকেও এআই ব্যবহার করে আইসি–কে ফোনের যুক্তি দিতে শোনা গিয়েছিল।

    সূত্রের দাবি, তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করার সময়ে অনুব্রত নিজের মোবাইল সঙ্গে নিয়ে যান। পুলিশ জানতে চায়, ‘আপনি আইসিকে ফোন করেছিলেন?’ কেষ্ট বলেন, ‘আমি আইসিকে ফোন করেছিলাম। আমাদের এক কর্মীকে মেরে হাত–পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, তাঁকে উদ্ধার করার জন্য।’

    অভিযোগ অস্বীকার করে অনুব্রত বলেন, ‘আমি রাতে কাউকে ফোন করি না। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।’ তা হলে যে অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) হয়েছে সেটা কী ভাবে হলো?

    কেষ্টর জবাব, ‘ওটা আমার গলা নয়। আমার গলা নকল করে ফাঁসানো হয়েছে।’ ফের পুলিশ জানতে চায়, ‘আপনি তা হলে ক্ষমা চাইলেন কেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওটা দলের ব্যাপার। দল যা বলবে, তাই করব। তাই করেছি। আমি দলের অনুগত।’

    বোলপুরের আইসির সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে সুদীপ্ত বলে একজনকে ‘ডেপুটেশনের ডেট করতে’ বলেন অনুব্রত। সুদীপ্ত নামে কেউ উপস্থিত ছিলেন কি না, জানতে চাওয়া হয়। আর কাকে তখন ফোন করেছিলেন? সেটা কার ফোন থেকে করেছিলেন? সূত্রের দাবি, অনুব্রত বলেন, ‘ঠিক মনে পড়ছে না।’

    শুক্রবারও অবশ্য কেষ্টকে বহাল তবিয়তেই দেখা গিয়েছে। এ দিনও তিনি পার্টি অফিসে যান। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে অনুব্রত বলেন, ‘কাশিটা এখনও আছে। শরীরও দুর্বল। কিন্তু দলের ছেলেগুলো আসছে, তাই পার্টি অফিসে আসছি।’

    এত কাণ্ডের পরে আগামী ১৪ জুন কি অনুব্রত বীরভূমের নবগঠিত কোর কমিটির বৈঠকে যোগ দেবেন? কেষ্টর জবাব, ‘যেতেও পারি। না–ও যেতে পারি। কারণ আমার বাইরে যাওয়ার কথা আছে।’

  • Link to this news (এই সময়)