সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণা নিবারণ তো বটেই, নিয়মিত সরবত তৈরি করে খেলে শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে নিয়মিত ভাবে চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন পাতিলেবু খাওয়ার জন্য। সেই প্রচারের সূত্রেই এ বার চাহিদা যথেষ্ট বেড়েছে পাতিলেবুর।
সাম্প্রতিক সময়ে ফের করোনার আগমন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। ফলে পাতিলেবুর বাজারে একটা নতুন ধরনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। পাতিলেবুর ভালো বাজার মেলায় মুখে হাসি ফুটেছে পূর্বস্থলীর পাতিলেবু চাষিদের।
পূর্বস্থলীর পারুলিয়া, বেলগাছি, জাহান্নগর, ভাতশালা, চণ্ডীপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিঘের পর বিঘে জমি জুড়ে হয় পাতিলেবুর চাষ। এমনই এক চাষি তোতন সাঁতরা।
তিনি বলছিলেন, ‘এই এলাকা থেকে লেবু যায় বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, কলকাতা, উত্তরবঙ্গ-সহ বিভিন্ন এলাকায়। পাতিলেবু চাষে খরচও খুব কম পড়ে। ১০ থেকে ১২ হাত অন্তর জমিতে গাছ বসানো হয়।
তিন বছর পর থেকেই লেবু ফলতে থাকে। বছরে দু’বার ফলন পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে প্রতিদিন দু’হাজারের মতো লেবু মেলে। ফলে আমরা একটু লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি।’
এই মুহূর্তে একটি লেবুর দাম দু’টাকা। তবে পৌষ মাসে দাম সবচেয়ে বেশি মেলে। তখন পিস প্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা দর পান চাষিরা। আর এক লেবুচাষি বিনয় রায়ের বক্তব্য, ‘লেবুকে দিন তিনেক রেখে দিলেই তার রং হলুদ হয়ে যায়। তখন সেই লেবুর দর আর মেলে না। তাই লেবু তোলার পরেই আমরা সেটা বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করি।’
তবে এ বারের ছবিটা কিছুটা হলেও অন্য ধরনের। ফলন ভালো হয়েছে, ভিন রাজ্য থেকে ব্যবসায়ীরাও লেবু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিকল্প চাষে যেমন চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন, তেমনই অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
আদুরি মাঝি নামে এক খেতমজুর বলছিলেন, ‘২৮০ টাকা মজুরি মেলে। দিনে প্রায় হাজার দেড়েক লেবু তুলতে হয়। খুব একটা কষ্ট হয় না।’ যোগ করলেন, ‘মাঠে ধান চাষ করতে গিয়ে যে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়, তার থেকে পরিশ্রমটা অনেকটা কম লেবুর চাষে। আমাদের পক্ষে বছরটা ভালোই যাচ্ছে। দু’বেলা খাবার তো মিলছে।’
কৃষি দপ্তরের আধিকারিক পার্থ ঘোষও এ বার পূর্বস্থলী জুড়ে পাতিলেবুর ফলন দেখে সন্তুষ্ট। তাঁর মন্তব্য, ‘কম খরচে ভাল ফলন মিলছে লেবুর। এখানে পরিচর্যার খরচও তুলনায় অনেকটা কম। পূর্বস্থলীর বিস্তীর্ণ অংশে লেবুর চাষ হয়। সেটা চাষিদের একটা বিকল্প আয়ের পথ দেখিয়েছে।’
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘সি’ ও খনিজ পদার্থে ভরপুর লেবু নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এতদিন পর্যন্ত গরমে রসনার তৃপ্তিতেই সীমাবদ্ধ ছিল পাতিলেবু।
শরবত তৈরিতেই তার ব্যবহার হতো প্রচুর। এ বার সেই পরিধিটা বেড়েছে। এখন ওষুধের গুণাগুণ থাকায় সাধারণ মানুষ আরও বেশি ঝুঁকেছেন পাতিলেবু কেনার উপরে। বেড়েছে চাহিদা। চাষিদের মুখের হাসিও ক্রমশ চওড়া হতে শুরু করেছে।