স্টাফ রিপোর্টার: দিঘার মন্দির থেকেই জগন্নাথদেবের প্রসাদ পৌঁছে যাবে বাংলার ঘরে ঘরে। সমস্ত ধর্মের, বর্ণের, জাতির মানুষ পাবেন এই মহাপ্রসাদ। জগন্নাথ দেবকে নিবেদিত খোয়া ক্ষীর মিশবে প্রতিটি প্রসাদে। সঙ্গে থাকবে মন্দিরের ছবি। ১৭জুন থেকেই জেলায় জেলায় বাড়ি বাড়ি এই প্রসাদ পেতে শুরু করবে সাধারণ মানুষ। উল্টোরথের মধ্যেই তা পৌঁছনো শেষ হবে। এদিকে, মহাপ্রসাদ বিতরণ নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই অপপ্রচার শুরু করে দেয় বিরোধী রাজনৈতিক শিবির। মানুষকে ভুল বোঝাতে মহাপ্রসাদ নিয়েও কুৎসা করতে ছাড়েনি বিজেপি। এদিন সন্ধ্যায় রবীন্দ্রসদনে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সরকারের গোটা পরিকল্পনার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। একইসঙ্গে বিরোধীদের অপপ্রচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তোপ দাগেন।
ইন্দ্রনীল বলেন, “সব মানুষের কাছে এই প্রসাদ যাবে। হিন্দু, মুসলিম, শিখ সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এই প্রসাদ পাবেন। এটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ায়ের প্রকল্প। ধর্ম আমার ধর্ম তোমার, উৎসব যেমন সবার, এই মহাপ্রসাদও সবার। বাংলার মানুষ জানেন, বিশ্বের মানুষের কাছে প্রমাণ করলেন, ওনার মতো সেকুলার একজন প্রশাসক ভারতবর্ষ কখনও দেখেনি।” মন্ত্রী এদিন পরিষ্কার জানিয়ে দেন, খালি হিন্দুদের প্রসাদ দেওয়া হবে বলে যে অপপ্রচার চলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এরকম কোনও পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের নেই। এমন কোনও সার্কুলারও হয়নি। এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাড়ি বাড়ি দিঘার প্রসাদ বিলি নিয়ে কুৎসা ও মিথ্যাচার করেছেন অভিযোগ করে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পরামর্শ, “দিঘার জগন্নাথ ধাম নিয়ে কুকথা বলার আগে যদি নিজেকে শুভেন্দু প্রকৃত হিন্দু মনে করেন, তাহলে একবার জগন্নাথদেবকে দর্শন করে আসুন। জগন্নাথে আস্থা রাখুন।” তাঁর সংযোজন, “আপনি তো মন্দিরের উপর বিশ্বাসই রাখেননি। মন্দির প্রতিষ্ঠার পর দূরে থেকেছেন তর্ক করেছেন। অথচ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ পা রাখছেন দিঘার জগন্নাথ ধামে।”
দিঘার মন্দির থেকেই মহাপ্রসাদ রাজ্যের মানুষের কাছে কীভাবে পৌঁছে যাবে, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে ইন্দ্রনীল জানান, “মিষ্টির দোকানে প্যারা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে যেটা রটানো হচ্ছে, সেটা মিথ্যা। ধাপে ধাপে এই খোয়া কেন্দ্রীয়ভাবে জগন্নাথদেবের চরণে সমর্পণ করে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে। বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে সেই মহাপ্রসাদ মিশিয়ে মিষ্টি তৈরি হবে।” জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ নিয়ে রাজনীতি করায়, নাম না করেই বিরোধী দলনেতাকে কড়া আক্রমণ শানান মন্ত্রী। বলেন, “এত আপনারা হিন্দু মুসলিম করেন কেন! ভয়ে? শুধু ধর্মীয় তাস খেলে বারবার ভোটে জেতার চেষ্টা করেছেন। এবং ব্যর্থ হয়েছেন। তাই হতাশা থেকেই আপনি এসব বলছেন।” মন্ত্রী বলেন, “ওদের পায়ের তলায় মাটি আর নেই। ভোট এলেই তাই ওরা ধর্মীয় মেরুকরণ করতে চায়।” এ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, “আসলে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দিঘার জগন্নাথ ধাম ঘিরে বাংলা তথা বাঙালির মধ্যে যে নয়া উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তাতে ভয় পেয়েছে বিজেপি।” এই মহাপ্রসাদ নিয়ে ইন্দ্রনীল জানান, মানুষের টাকাতেই এই মন্দির হয়েছে। তাঁদের টাকাতেই এই মহাপ্রসাদ বাড়ি বাড়ি পৌঁছবে। ১০ টাকা করে প্যাঁড়া, ১০ টাকা করে গজা।
পাশাপাশি, তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব শান্তনু বসু বলেন, “সোমবারই এই মহাপ্রসাদের প্রসাদী খোয়া প্রথম কিস্তিতে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে পাঠানো হবে। তা জগন্নাথ দেবের শ্রীচরণে সমর্পণ করা হবে। সেই খোয়া মহাপ্রসাদ হলে জেলায় জেলায় পৌঁছে যাবে মিষ্টির দোকানে। মিষ্টি তৈরির সময় এই খোয়া মিশিয়ে দেওয়া হবে। মানুষের কাছে যখন সেটা যাবে সেটা প্রসাদ। রেশন ডিলারদের মাধ্যমেই তা পাঠানো হবে। মিষ্টির গুণমান ঠিক রাখতে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টরও রাখা হয়েছে।”