• হাজিরা খাতায় সই সত্ত্বেও বেপাত্তা হিটলার চৌধুরী
    এই সময় | ০৭ জুন ২০২৫
  • এই সময়, রামপুরহাট: তিনি আসছেন, হাজিরা খাতায় সই করছেন, এর পরে চলে যাচ্ছেন — এমনই চলছে গত পাঁচ দিন ধরে। তিনি আর কেউ নন, বীরভূম জেলার রামপুরহাট–১ ব্লকের বিএমওএইচ হিটলার চৌধুরী।

    অন্য দিকে, শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের যে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে অনুব্রত মণ্ডল এত দিন পুলিশি হাজিরা এড়িয়েছেন, তাতে সই রয়েছে এইচ চৌধুরীর। তিনি ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরএমও।

    এই দু’জন একই ব্যক্তি কি না, সে প্রশ্ন বার বার উঠেছে। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে কি ‘নন–প্র্যাকটিশিং’ প্রশাসনিক ক্যাডার হিসেবে কর্মরত একজন সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিক অন্যত্রও কর্মরত?

    বিএমওএইচ হিটলার চৌধুরীর এই বিতর্কের মধ্যে অফিস আসছেন কি না, সেই বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, তিনি অফিসে আসছেন, হাজিরা খাতায় সই করছেন আর তার পরে মোটরবাইক নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

    তাঁর সরকারি গাড়ি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে রামপুরহাট চকমণ্ডলা পাড়ার বিএমওএইচ অফিসে। তিনি কি ভিজিট গিয়েছেন?— এ কথা জানতে চাইলে তাঁর অফিসের সবাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এ দিকে তাঁর গ্রামের বাড়ি জবুনি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বাড়িতে তালা ঝুলছে।

    রামপুরহাট রেলপাড়ে তাঁর ফ্ল্যাটেও তালা। তা হলে হিটলার গেলেন কোথায়? রামপুরহাট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে–র সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘আমি বিষয়টি উপরমহলে জানিয়েছি। যেমন নির্দেশ আসবে, তেমন পদক্ষেপ করব। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।’

    শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজের প্রেসক্রিপশন তথা মেডিক্যাল সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, অনুব্রত মণ্ডল অসুস্থ। তাঁর জ্বর–কাশি–শ্বাসকষ্ট রয়েছে। তাঁকে পাঁচ দিনের রেস্টের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসা নথিতে।

    গোল বেঁধেছে এর পরেই! মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের তলায় সই করেছেন চিকিৎসক এইচ চৌধুরী। নামের তলায় রেজিস্ট্রেশন নম্বর ডব্লিউবিএমসি৮৭৮৪৫। ডেট দেওয়া হয়েছে ৩১ মে। সই করা হয়েছে রাত ৯.১৩ মিনিটে।

    রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের ডেটা অনুযায়ী, এই রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে সার্চ করতেই চিকিৎসক হিটলার চৌধুরীর নাম উঠে আসছে। যিনি চিনের কুমনিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিবিএস পাশ করে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে নাম নথিভুক্ত করেছেন।

    প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিক হিটলার চৌধুরী? যদি তা না হন, তা হলে কি এই মেডিক্যাল সার্টিফিকেট আদৌ বৈধ? যদি সই ও রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট ঠিক হয়, তা হলে চিকিৎসক হিটলার চৌধুরী সরকারি পদে থেকে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের হয়ে কী ভাবে চিকিৎসা করেন?

    উল্টো দিকে, এটা যদি ওঁর সই না হয়, তা হলে চিকিৎসকের সই জাল করে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে কি? এই নিয়ে চিকিৎসক হিটলার চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি।

    বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সোরেনের প্রতিক্রিয়া নেওয়ার চেষ্টা করা হলে, তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর ভয়েস মেল বক্সে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট মেসেজও করা হয়। সেই মেসেজ ‘রিড’ করলেও তার কোনও উত্তর তিনি দেননি।

  • Link to this news (এই সময়)