রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার বলি হয়েছে ২৬ নিরীহ প্রাণ। তারপর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে ‘শত্রুতা’ বেড়েছে। বয়কট রবও উঠেছে। কিন্তু ব্যতিক্রমও রয়েছে এই বাংলার মাটিতে। পাকিস্তানি রক্ত শরীরে নিয়েই বহাল তবিয়তে জঙ্গল এলাকার পর্যটকদের পাহারা দিচ্ছে মালঙ্গি ও টবু। এরা পাকিস্তানি পিট বুল প্রজাতির দুই কুকুর। বয়স মেরেকেটে পাঁচ। একবার পাকিস্তান থেকে আমদানি করা দুই কুকুরই এখন হোম স্টে-র সবচেয়ে বড় ভরসা। একদিকে যেমন হোম স্টে-তে থাকা পর্যটকদের রক্ষায় তারা সদা সতর্ক, তেমনই এত বড় হোম স্টে-র সম্পত্তি রক্ষার ভারও তাদের উপর।
জলদাপাড়ার জঙ্গল লাগোয়া শিসামারা নদীর ধারেই রয়েছে ‘রাইনো কটেজ’ নামে একটি হোম স্টে। এখানে নিত্যদিন বন্য জন্তুদের হামলা লেগেই থাকে। আর তাদের হাত থেকে হোম স্টে-র নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে পাকিস্তানি পিট বুল প্রজাতির দুই কুকুর মালঙ্গি ও টবু। দু’জনকে দেখতে যেমন তাগড়াই, তেমনই এদেক ডাক। দেখেশুনে প্রাণে ডর লাগে বটে! এই হোম স্টে-র ম্যানেজার অরুণাশিস চক্রবর্তী বলেন, “না না, এত কিছুর পরেও আমাদের মালঙ্গি ও টবুর প্রতি প্রেম ভালবাসা একটুও কমেনি। আর তাছাড়া ওরা থাকা মানে আমাদের হোম স্টে সুরক্ষিত থাকা। হাতি বা চিতাবাঘ যাই আসুক, ওরা সকলকে সতর্ক করে দেয়। বুনো জন্তুদেরও ভয় দেখিয়ে দেয়। হোক ওরা পাকিস্তানি, ওদের প্রতি ভরসা আমাদের ১০০ শতাংশ।”
তবে এই রিসোর্টের অন্য এক ম্যানেজার প্রদীপ রায়ের সুর কিন্তু একটু আলাদ। তাঁর কথায়, “পহেলগাঁও ঘটনার পরে ওদের নিয়ে আমাদের একটু অস্বস্তি হয়েছে ঠিকই। যেহেতু ওদের নামের সঙ্গে পাকিস্তান জড়িয়ে। কিন্তু তা বলে কী আর আমরা আমাদের সুরক্ষায় কোনওরকম খামতি রাখব? আর দুই দেশের যা ঝামেলা, তা তো মানুষকে নিয়ে। ওরা তো নিরপরাধ পোষ্য। ওদের আর দোষ দিয়ে কী লাভ? তবে আমাদের এই দুই কুকুর বেশ বিশ্বস্ত ও ভরসাযোগ্য। ওরা খুব শান্ত, ভদ্র। রাতে হোম স্টে পাহারা দেওয়ার জন্য ওদের ছেড়ে দেওয়া হয়।”
মালঙ্গি আর টবু কিন্তু পর্যটকদের কাছেও খুব আদরের। কলকাতা থেকে এসে এখন ‘রাইনো কটেজ’ হোম স্টে-তে রয়েছেন সঙ্গীতা গুপ্ত। তিনি কুকুর প্রেমী। আসার পরই তাই দুই পাকিস্তানি পিট বুলের সঙ্গে পরিচয় তো বটেই, বেশ বন্ধুত্বও হয়ে গিয়েছে তাঁর।সঙ্গীতার কথায়, “দেখুন বন্য পশু বা পাখিদের মধ্যে কোনও বিদ্বেষ হয় না। দেশ-কাল ছাড়িয়ে ওদের ভালবাস ও প্রেম। তাতে কোনও কৃত্রিমতা থাকে না। আমি তো ওদের আদর করে এলাম। হোক না ওরা পাকিস্তানি, তাতে আমার বয়েই গেল।”