‘ডু ইট নাউ’ স্টাইলে অস্ত্রোপচার, ৫৩ মাসে ৫৩ অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি বাদ দিয়ে রেকর্ড মেডিক্যাল কলেজের
প্রতিদিন | ০৭ জুন ২০২৫
অভিরূপ দাস: ‘ওয়েটিং’-এ থাকার দিন শেষ। অস্ত্রোপচার হবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। ৫৩ মাসে ৫৩ টা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অস্ত্রোপচার করে এমনই বার্তা দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। গোটা হাসপাতালের নয়। এ পরিসংখ্যান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছোট্ট একটা ইউনিটের। সার্জারি বিভাগের ইউনিট ফাইভ অপরাজেয়। ৫৩ মাস আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের(ইউনিট ফাইভ) ব্রেস্ট অ্যান্ড এন্ডোক্রিন বিভাগের দায়িত্ব নেন ডা. ধৃতিমান মৈত্র। সম্প্রতি ৫০ তম রোগীর দেহে ৫৩ তম অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অস্ত্রোপচার সারলেন তিনি। অন্যান্য অস্ত্রোপচার আকছার হলেও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির অস্ত্রোপচার অত্যন্ত বিরল। দেশে ফি বছর, প্রতি এককোটি জনসংখ্যা পিছু ৫ থেকে ২০ জন মাত্র আক্রান্ত হন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির টিউমারে।
ডা. ধৃতিমান মৈত্র জানিয়েছেন, সাধারণত অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির টিউমার আকারে ছোট। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে নকুলদানার সাইজের টিউমারই অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে। কারণ? অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি রোজকার স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রক্তে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এই গ্রন্থি। শরীরের রক্তচাপও পরিচালনা করে গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রন্থি। একটা প্যারামিটারও ঠিক ছিল না মেডিক্যাল কলেজের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা নিয়ে আসা পঞ্চাশতম রোগিণীর। মাত্র ৪২ বছরের মহিলার রক্তচাপ ছিল মাত্রাছাড়া। শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা মারাত্মক কমে গিয়েছিল। পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ায় শরীরে দুর্বলতা ছিল ভয়ানক। মহিলা আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ডা. ধৃতিমান মৈত্র জানিয়েছেন, পটাশিয়াম কমে গিয়ে পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছিল রোগিণীর। পটাশিয়াম সিরাপ খাইয়ে রোগীকে সাময়িকভাবে স্বাভাবিক রাখকে হত।
তবে আশঙ্কা যা করা হয়েছিল সেটাই সত্যি! পেটের আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় বাঁদিকের অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডে ছোট্ট একটা টিউমার। যার জেরে অ্যালডোস্টেরন হরমোন অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসৃত হচ্ছে। শরীরের রক্তচাপের খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করে এই অ্যালডোস্টেরন হরমোন। অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণের ফলে রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল ওই মহিলার। শেষমেশ অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হল অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড। এই নিয়ে ৫০টা রোগীর ৫৩ টি অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড বাদ দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইউনিট ৫। একাধিক কারণে বাদ দিতে হয় অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড। ডা. ধৃতিমান মৈত্রর কথায়, ফিওক্রোমা সাইটোমা, মাইলোলাইপোমা, অ্যাড্রিনো কর্টেসল ক্যানসার, এমন নানা কারণে বাদ দিতে হয় এই গ্রন্থি।