কাজের নাম করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া। তারপরে অশালীন প্রস্তাব। রাজি না হওয়ায় ৬ মাস ধরে বাড়িতে আটকে রেখে অকথ্য অত্যাচার। এমনই ভয়াবহ অভিযোগ উঠল সোদপুরে। উত্তর ২৪ পরগনায় সোদপুরের এক তরুণীকে হাওড়ার একটি বাড়িতে আটকে ব্যাপক মারধর ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। জুনের প্রথম সপ্তাহে পালিয়ে বাড়ি ফেরেন ওই তরুণী। এখন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। তরুণীর পরিবারের তরফে হাওড়ার একটি পরিবারের বিরুদ্ধে সোদপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ভয়ানক অত্যাচারের শিকার হয়েছেন তিনি। এখন সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। পরিবার জানাচ্ছে, বহুদিন আগে থেকেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন ওই তরুণী। পরিবারের আর্থিক দায়-দায়িত্ব তাঁর কাঁধেই ছিল। কাজের সূত্রেই হাওড়া ডোমজুড়ের এক বাসিন্দার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর আরিয়ান কাজের নাম করে ওই তরুণীকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, কেটারিংয়ের কাজ আছে বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিছুদিন ওই কাজ করানোর পরে অভিযুক্ত যুবক তরুণীকে অশালীন প্রস্তাব দেয় বলে পরিবারের অভিযোগ। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি ওই তরুণী। তার পরেই তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করা হয় বলে অভিযোগ। তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, শুধু ওই যুবক নন, তাঁর মা ও বোনও নির্যাতন করতেন। পরিবারের দাবি, লোহার রড ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে মারধর করা হয়েছে তরুণীকে। তাঁর হাত-পা এবং দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ঘরে আটকে রেখে খেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তরুণীর মায়ের অভিযোগ, যৌনাঙ্গে লোহার রড ঢোকানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। ৬ জুন ভোরে কোনও রকম ভাবে পালিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন ওই নির্যাতিতা। তাঁর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত তাঁকে সাগর দত্ত মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি এখন চিকিৎসাধীন। কিন্তু এতদিন মেয়ের খোঁজ কি করেনি পরিবার? স্থানীয় সূত্রের খবর, বাড়িতে টাকা পাঠাতো ওই তরুণী। ফোনে কথা হয়েছে, সেখানেও কোনও অভিযোগ করেনি ওই তরুণী। পরিবারের দাবি, ফোনে কথা বলার সময়ে অভিযুক্তের পরিবার ভয় দেখিয়ে তাঁকে সত্যি কথা বলতে দিত না।
এই ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার ওই পরিবারটির বিরুদ্ধে খড়দহ থানার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর জানান, ঘটনায় অভিযোগ হয়েছে, সেই FIR ট্রান্সফার করা হয়েছে হাওড়া থানায়। মহিলার শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। এ দিকে শনিবার বিকালে খড়দহ থানা ও ডোমজুড় থানার পুলিশ এবং ব়্যাফ বাঁকড়া বাজার এলাকায় অভিযুক্তের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু বাড়ি তালা বন্ধ ছিল। কাউকে পাওয়া যায়নি। আশপাশের কয়েকটি ফ্ল্যাট এবং বাড়িতেও তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিন কয়েক ধরে অভিযুক্তকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটিকে ওই বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল কিনা সেই ব্যাপারে পড়শিরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।