প্রতিম মৈত্র, ঝাড়গ্রাম: বাস্তু জমির অধিকার নিয়ে বিবাদ থেকে হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী রইল ঝাড়গ্রাম। বউদি এবং দুই ভাইপো মিলে যুবককে নৃশংসভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগে সরগরম এলাকা। পুলিশ সূত্রে খবর, গলার নলি কেটে ওই যুবককে খুন করার পর দেহ লোপাটের উদ্দেশে বাঁশ বাগানে নিয়ে গিয়ে দেহটি কেটে ফেলার চেষ্টাও করা হয়। এই নৃশংস ঘটনায় পুলিশ বউদি এবং এক ভাইপোকে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে ঝাড়গ্রাম থানার চন্দ্রী অঞ্চলের আউশপাল গ্রামে।
পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত যুবকের নাম বাহাদুর হেমব্রম, বয়স ২৬ বছর। খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে নিহতের বউদি গুরুবারি এবং তার ছোট ছেলে সরোজ হেমব্রমকে। বড় ছেলে মনোজ পলাতক। কী নিয়ে এত বড় ঘটনা? আউশপাল গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে থাকে নিহত বাহাদুর হেমব্রম এবং তার খুড়তুতো দাদা গালু হেমব্রমের পরিবার। নিহত বাহাদুর হেমব্রমের বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা, মা মানকো হেমব্রম, দাদা রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর স্ত্রী পুতুল।
অন্যদিকে, এদের লাগোয়া বাড়িতে থাকে বাহাদুরের খুড়তুতো দাদা গালু হেমব্রম, তাঁর স্ত্রী গুরুবারি, বড় ছেলে মনোজ, ছোট ছেলে সরোজ। মনোজ কলেজে পড়ে, সরোজ লেখাপড়া করে না। আবাস যোজনায় এদের বাড়ি রয়েছে। তবে এই দুই পরিবারের মধ্যে বাস্তু জমির ভাগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ঝামেলা রয়েছে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে দশটা নাগাদ বাহাদুর ফোনে কথা বলছিলেন। এরপর জমি নিয়ে বউদি ও ভাইপোদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। হঠাৎ তাঁর মা বাহাদুরের আর্ত চিৎকার শুনে বড় ছেলে রবীন্দ্রনাথকে ডাকতে থাকে। তাঁর মা মানকো দেখতে পেয়েছিলেন, বাহাদুরকে চ্যাংদোলা করে তাঁর বউদি এবং দুই ছেলে বাঁশ বাগানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তার চিৎকারে বড় ছেলে এবং প্রতিবেশীরা বাঁশবাগানে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত বাহাদুরের ধড় থেকে মুণ্ড প্রায় ছিন্ন এবং পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছে!
জানা গিয়েছে, বাঁশ বাগানে নিয়ে যাওয়ার আগেই ধারালো অস্ত্রে বাহাদুরের গলার নলি কেটে খুন করা হয়। তারপর দেহ লোপাট করার উদ্দেশে বাঁশবাগানে নিয়ে গিয়ে দেহ কাটার চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ মর্গে পাঠিয়ে দেয় এবং অভিযুক্ত গুরুবারি এবং তার ছোট ছেলে সরোজকে গ্রেপ্তার করে। বড় ছেলে মনোজ পলাতক।
এ বিষয়ে মৃতের দাদা রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম বলেন, “জমি নিয়ে রাতে হঠাৎ করে ভাইয়ের সঙ্গে গন্ডগোল শুরু হয়। সেই সময় ভাইকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে নিয়ে এসে বাঁশ বাগানের দিকে নিয়ে যায়। সেই সময় মায়ের চিৎকার শুনে আমি বাইরে বেরিয়ে দেখি ভাইকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি বাড়ি থেকে টর্চ নেওয়া জন্য ফের বাড়িতে আসি। সেই সময় ভাইয়ের গলা কেটে খুন করে। তারপর বাঁশ বাগানে নিয়ে গিয়ে পেট কেটে আলাদা করে দেহ লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। সেই সময় আমরা পৌঁছে যাওয়ায় দেহ ছেড়ে ওরা পালিয়ে যায়।”