তিস্তার ভয়ঙ্কর রূপ, নদীর স্যাটেলাইট ছবি পেতে ইসরোর দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্য সেচদপ্তর
বর্তমান | ০৮ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: সিকিমে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে তিস্তা। ঘনঘন বদলাচ্ছে তার গতিপথ। এতে বাড়ছে ভাঙন, বিপন্ন জনপদ। এই পরিস্থিতিতে তিস্তা কোথায়, কতটা বিপজ্জনক চেহারা নিয়েছে, তা জানতে এবার ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের দ্বারস্থ হচ্ছে রাজ্যের সেচদপ্তর। ইসরোর কাছ থেকে তিস্তার স্যাটেলাইট ইমেজ পেতে চাইছে তারা। শনিবার রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, আমাদের দপ্তর তিস্তা নিয়ে ইতিমধ্যে সমীক্ষা করেছে। তাতে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। তিস্তার স্যাটেলাইট ইমেজও পাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। তাঁর তোপ, তিস্তায় বাঁধ দিয়ে অবৈজ্ঞানিকভাবে সিকিমে ছ’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তারই জেরে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে নদী। পাহাড় থেকে বিপুল জলরাশির সঙ্গে বোল্ডার, মাটি নিয়ে এসে সমতলে ফেলছে তিস্তা। ফলে বাংলাকে ভুগতে হচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে সিকিমের লোনক হ্রদ বিপর্যয়ের পর থেকে তিস্তার অবস্থা ‘বিপজ্জনক’ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন সেচদপ্তরের উত্তরপূর্বের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক। এদিন তিনি বলেন, আমাদের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, সিকিমের বিপর্যয়ের জেরে সমতলে তিস্তার তলদেশ ৩-৫ ফুট উঁচু হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও নদীখাত এতটা উঁচু হয়ে গিয়েছে যে, নীচে চলে গিয়েছে জনপদ। দীর্ঘ গতিপথে তিস্তার বর্তমান অবস্থা জানতে স্যাটেলাইট ইমেজের প্রয়োজন। এনিয়ে রাজ্যে প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, আগে যেখানে কয়েক দশক পর তিস্তার গতিপথের বদল হতো, ২০২৩ সালে সিকিমে বিপর্যয়ের পর দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছরই ওই নদীর গতিপথ বদলাচ্ছে।
সেচমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নদী সিকিম থেকে আসছে। ফলে এটা শুধু বাংলার বিষয় নয়। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার এনিয়ে টুঁ শব্দ করছে না। নদীপাড়ের মানুষজনকে রক্ষা করতে আমরা তিস্তায় ড্রেজিং করছি। তিস্তা নিয়ে আমরা বৃহত্তর পরিকল্পনা নিচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এ ব্যাপারে নজর রাখছেন।
সেচদপ্তর সূত্রে খবর, সেভকের কাছে গতিপথ বদলে তিস্তা ঢুকে পড়েছে ডানদিকে। ফলে চমকডাঙি ও লালটং বস্তির মতো দীর্ঘদিনের দু’টি জনপদ কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য। ক্রান্তির চ্যাংমারি এলাকায় এসে আবার বাঁদিকে বাঁক নিয়েছে তিস্তা। ফলে সেখানেও বিপন্ন গ্রাম। নদীর জল ঢুকে পড়ায় এবারও চ্যাংমারির পশ্চিম দলাইগাঁও এলাকার প্রায় শ’খানেক পরিবারকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। ঠাঁই নিতে হয়েছে বাঁধে। গজলডোবার কাছে তিস্তা ডানদিকে ঘুরে যাওয়ায় বিপদের আশঙ্কায় দিন গুনছেন স্থানীয় মিলনপল্লির বাসিন্দারা। দ্রুত সেখানে পদক্ষেপ না নেওয়া গেলে তিস্তার ছোবলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ‘ভোরের আলো’ প্রকল্প, এমনটাই মনে করেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। -নিজস্ব চিত্র