• চিলাপাতার জঙ্গলে ইতিহাসের হাতছানি দেয় নল রাজার গড়, রক্ষণের অভাবে পরিণত ধ্বংসাবশেষে, সংরক্ষণের দাবি হেরিটেজ সোসাইটির
    বর্তমান | ০৮ জুন ২০২৫
  • রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: জলদাপাড়ায় চিলাপাতা জঙ্গলের ভিতরে  অনাদরে পড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক নল রাজার গড়। গুপ্তযুগের সময়কালের এই গড় সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। জেলার পর্যটন প্রসারে ও পর্যটক টানতে সেই নল রাজার গড়ের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের দাবি তুলল আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটি। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে জেলার বিশিষ্টরা।

    আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটি জেলার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলিকে সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দাবিতে কাজ শুরু করেছে। সোসাইটির সদস্যরা শনিবার স্টাডি ভিজিটে নল রাজার গড়ে যান। ওই গড় পরিদর্শনে ছিলেন আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরিৎকুমার চৌধুরী এবং আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক দেবব্রত রায় সহ সোসাইটির সদস্যরা। ছিলেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও প্রবীণ কাসোয়ানও। গড় দেখে আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তথা আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটির পেট্রন শরিৎকুমার চৌধুরী বলেন, আমরা দেখছি, সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে জেলা প্রাচীন নির্দর্শনগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে। তারমধ্যে অন্যতম নল রাজার গড়। বর্তমান প্রজন্মের অনেকে এই নির্দশনগুলির ইতিহাস জানে না। নল রাজার গড় সহ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি গবেষণা করতে পারে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সেজন্য আমরা চাইছি, এই গড় এবং জেলার সমস্ত প্রাচীন নির্দর্শন নিয়ে গবেষণা হোক। একটা গবেষণার পরিবেশ গড়ে উঠুক জেলায়। এই গবেষণার জন্য ভবিষ্যতে  বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।   

    গড়ের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনের পর সোসাইটির সভাপতি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, সংরক্ষণের অভাবে জেলার ঐতিহাসিক পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি নষ্ট হতে বসেছে। তাই জেলার পর্যটনের বিকাশ ও পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি সংরক্ষণের জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাব। নল রাজার গড়ের সংরক্ষণের বিষয়টি আমি বিধানসভায় তুলে ধরব। সোসাইটির সম্পাদক শুভময় দত্ত বলেন, সরকারিভাবে জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দাবিতে আমরা কাজ শুরু করেছি। পর্যটনের প্রসারে নল রাজার গড়কে সংরক্ষণের জন্য সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তর ও পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে দাবি জানানো হবে।

    চিলাপাতার জঙ্গলে এই গড় বা কেল্লা বানিয়েছিলেন নল রাজা। ঠিক কবে এই গড় তৈরি হয়েছিল তা ঐতিহাসিকদের গবেষণার বিষয়। তবে জানা গিয়েছে, এই গড় গুপ্তযুগের সময়কালের। সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে জেলার গর্ব এই প্রাচীন গড়ের বর্তমানে ধ্বংসাবশেষ অবস্থা। জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে গড়টি।

    আলিপুরদুয়ার হেরিটেজ সোসাইটির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জেলার বিদ্ব্যজনদের একটা অংশ। জেলার লোকসংস্কৃতি গবেষক বঙ্গরত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত  প্রমোদ নাথ বলেন, দেরিতে হলেও এই উদ্যোগ নেওয়ায় স্বাগত জানাচ্ছি। নল রাজার গড়ের সংস্কার ও সংরক্ষণ হলে পর্যটকরা আকর্ষিত হবেন। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। প্রসার ঘটবে জেলার পর্যটন সার্কিটের।  নল রাজার গড়ে হেরিটেজ সোসাইটির সদস্যরা। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)