• এবার বার্ষিক বৃষ্টি বাড়তে পারে উত্তরবঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় উত্তরকন্যায় সমন্বয় বৈঠক
    বর্তমান | ০৮ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: এবার বৃষ্টি বাড়ছে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে। প্রশাসন সূত্রে খবর, গতবছরের তুলনায় এবার পাঁচ মাসে সংশ্লিষ্ট দু’টি জায়গায় ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলার অবস্থাও প্রায় এক। তাই এবার উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে বলেও সম্ভাবনা। এই অবস্থায় শুক্রবার দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে মিনি সচিবালয় ‘উত্তরকন্যায়’ বিশেষ সমন্বয় রক্ষা কমিটির বৈঠক হয়। তাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, পঞ্চায়েত, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি দপ্তরের শীর্ষকর্তারা ছিলেন। 

    এবার সময়ের আগে উত্তরবঙ্গে নেমেছে বর্ষা। চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। এই অবস্থায় শিলিগুড়িতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত। বিশেষ করে প্রতিরাতেই বৃষ্টি হচ্ছে। দপ্তর সূত্রে খবর, গতবছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৪৫৪ মিলিমিটার। যারমধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টিই হয়নি। মার্চে ১২০, এপ্রিলে ৩০.৬০ এবং মে মাসে ৩০৩.৪০ মিমি বৃষ্টি হয়। এবার জানুয়ারি থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। জানুয়ারিতে ১.৬০, ফেব্রুয়ারিতে ৪.৬০, মার্চে ২৬, এপ্রিলে ২৪৬.৮০ এবং মে মাসে ৩২৮.৮০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ মাসে বৃষ্টির পরিমাণ ৬০৭.৮০ মিমি। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় বৃষ্টি বেড়েছে ১৫৩.৮ মিমি। 

    সেচদপ্তরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, পাঁচ মাসের বৃষ্টির ট্রেন্ড এবং গত দশ বছরের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে গত মরশুমের তুলনায় এবার বেশি বৃষ্টি হবে। গতবছর শিলিগুড়ির বার্ষিক বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৩৪১০ মিমি। এবার তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩৬০০ মিমি।

    পাশের জেলা জলপাইগুড়িতে বৃষ্টির দাপট আরও বেশি। সেচদপ্তর সূত্রের খবর, পাঁচ মাসে এই জেলা গত চার বছরের বৃষ্টির রেকর্ড অতিক্রম করেছে। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ২০২১ সালে ৪৮১.৫০, ২০২২ সালে ৫৩৫.২০, ২০২৩ সালে ৪২৫.৬০ এবং ২০২৪ সালে ৩৮৬.৩০ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪৯.৬০ মিমি। এবার জলপাইগুড়িতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ৩৭৬৮.৪০ মিমি। এবার পাঁচ মাসে কোচবিহারে ৯৯৭.৫০ এবং আলিপুরদুয়ারে ১০১৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা, যথাক্রমে ৩০১৬.১০ এবং ৩৭৬৮.৪০ মিমি। 

    বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ডিভিশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, আবহাওয়ার উপর নজর রাখা হয়েছে। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার পরামর্শমতো বন্যা, নদী ভাঙন রোধে তৎপর রয়েছি। তাই ছুটির দিনে ডায়না নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছি। 

    এদিকে, বন্যা সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে সমন্বয় কমিটির বৈঠক হল উত্তরকন্যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব দুষ্যন্ত নাড়িয়ালা ওই বৈঠক তলব করেন। তাতে কৃষিদপ্তরের প্রধান সচিব ওঙ্কারসিং মিনা, পঞ্চায়েত দপ্তরের সচিব পি উলগানাথন, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের বিশেষ সচিব শীতলচন্দ্র মণ্ডল, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ডেপুটি সক্রেটারি শচীভূষণ সমাদ্দার, স্বাস্থ্যদপ্তরের সচিব, বিদ্যুৎবণ্টন কোম্পানির ডিরেক্টার, সেচ সহ বিভিন্ন দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা ছিলেন। ভার্চুয়ালি বৈঠকে শামিল হন প্রতিটি জেলার ডিএম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার এবং সর্বদা সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)