নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: পশ্চিম বর্ধমান থেকে বাঁকুড়ায় কয়লা পাচারের বড়সড় চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পড়শি পশ্চিম বর্ধমান জেলার রানিগঞ্জ এলাকায় বেআইনিভাবে কয়লা উত্তোলনের পর পাচারকারীরা বাঁকুড়ায় দেদার চোরাচালান করছে। সম্প্রতি ছাতনা থানায় কয়লা পাচারের সঙ্গে যুক্তদের গ্রেপ্তারের পর জেরা করে পুলিস ওই চক্রের ব্যাপারে জানতে পেরেছে। চক্রের পাণ্ডারা রানিগঞ্জে বসে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
পশ্চিম বর্ধমান থেকে মেজিয়া ও শালতোড়া হয়ে বাঁকুড়ায় চোরাই কয়লা পাঠানো হচ্ছে। বেআইনিভাবে সাইকেল, বাইক ও ম্যাটাডোরে বস্তা ভরে কয়লা বাঁকুড়া হয়ে জঙ্গলমহলে পাচার করা হচ্ছে বলে ধৃতরা পুলিসি জেরায় জানিয়েছে। পুলিসের নজর এড়াতে অনেকসময় টোটোতেও কয়লা পাচার হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তঃ জেলা সীমানায় পুলিসি নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিসের দাবি, বর্তমানে বাঁকুড়ায় কোনও বেআইনি কয়লা খাদান নেই। বড়জোড়া থানা এলাকায় দু’টি খোলামুখ খনি থেকে বৈধভাবে কয়লা উত্তোলন করা হয়। তা মূলত ট্রাক বা ডাম্পারে পরিবহণ করা হয়। ফলে জেলায় সাইকেল, বাইক বা অন্য কোনও ছোট যানবাহনে কয়লা পরিবহণ করা হলেই স্থানীয় থানায় জানানোর জন্য বাসিন্দাদের কাছে পুলিস আধিকারিকরা অনুরোধ করছেন।
এব্যাপারে বাঁকুড়ার এক পুলিস আধিকারিক বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বেআইনি কয়লা পাচারের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। বাঁকুড়া-শালতোড়া রাজ্য সড়ক হয়ে সবচেয়ে বেশি কয়লা এই জেলায় আনা হচ্ছিল। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ছাতনা থানার পুলিস দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে কয়েকজন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের কাছ থেকে ২৬ কুইন্টাল কয়লা বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেইসঙ্গে একাধিক বাইক ও একটি তিন চাকার ম্যাটাডোরও আটক করা হয়। আমরা পশ্চিম বর্ধমানের সীমানায় কড়া নজরদারি চালাচ্ছি।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূমের একাংশে বেআইনি কয়লা কারবারের রমরমা ছিল। তৃণমূল জামানাতেও বেশকিছু এলাকায় বেআইনি খাদান চলার অভিযোগ উঠে। যদিও কয়লা পাচার নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি ময়দানে নামার পর বেআইনি খাদানগুলি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ফের কয়লা মাফিয়ারা সক্রিয় হয়েছে বলে পুলিস জানিয়েছে। রানিগঞ্জ থেকে বাঁকুড়ায় কয়লা পাচারে অভিযুক্তদের বাড়ি এজেলার শালতোড়া থানা এলাকায়। ফলে উৎস থেকে কয়লা পাচারের জন্য মাফিয়ারা স্থানীয় যুবকদের নিয়োগ করছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। বেআইনি কয়লা কম দামে ইটভাটায় বিক্রি করা হয় বলে পুলিস আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন। ফলে বাঁকুড়ার ভাটাগুলিতে পুলিস নজর রাখতে শুরু করেছে।