সংবাদদাতা, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের সোনার তরী আবাসনের পর পর আটটি ফ্ল্যাটে দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দুষ্কৃতীরা আবাসনে ঢুকে গয়না, টাকাপয়সা সহ বেশকিছু সামগ্রী লুট করেছে। আবাসনগুলিতে লোকজন ছিল না। তারই সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা। আবাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হতেই আবাসন ও সংলগ্ন প্রান্তিক এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিসের ভূমিকায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ফ্ল্যাটের মালিকরা। এই আবাসনে কোনও সিসি ক্যামেরাই নেই। অভিযোগ জানানোর ২৪ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও পুলিসের তৎপরতা দেখা যায়নি বলে আবাসিকদের অভিযোগ। যদিও পুলিসের দাবি, ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ৯০-এর দশকে শান্তিনিকেতনের প্রান্তিকে বিশাল জায়গাজুড়ে এই আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০০২সালে সোনার তরী আবাসন প্রকল্পের প্রথম ফেজের উদ্বোধন হয়। সেখানে মোট ১৭৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তারপরই দ্বিতীয় ফেজের কাজ শুরু হয়। সেটি ২০০৫-’০৬ নাগাদ সম্পূর্ণ হয়। এতে মোট ১৭৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়, বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সহ আরও অনেক হেভিওয়েট তারকা এই আবাসনের বাসিন্দা। মূলত কলকাতা ও শহরতলি এলাকার মানুষজনই এই আবাসনে ফ্ল্যাট কিনেছেন। প্রায় সারা বছরই অধিকাংশ ফ্ল্যাট ফাঁকা অবস্থায় থাকে। শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের সময় মূলত তাঁরা আসেন।
আবাসিকদের বক্তব্য, এই ধরনের ডাকাতির ঘটনা এবারই প্রথম। দরজার তালা ভেঙে লুটপাট চালিয়েছে ডাকাতদল। কলকাতার নিউ আলিপুরের বাসিন্দা সোনার তরীর আবাসিক দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ফোন মারফত ডাকাতির ঘটনা জানতে পারি। আমার ছাড়াও প্রতিবেশী প্রীতিময় চন্দ্র, তপন গড়াই, দেবেশ নাথ, বাসবী বাগচী, সুপর্ণা মিত্র সহ মোট আটজনের ফ্ল্যাটে ডাকাতি হয়েছে। আমার বাড়িতে মূল্যবান কিছু না থাকলেও জামাকাপড়ের আলমারি তছনছ করে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। মূল্যবান কিছু ছিল না, নচেৎ সবটাই ডাকাতদল সাবাড় করে দিত। তিনি বলেন, ১৮ বছর ধরে এখানে রয়েছি। এই ধরনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত শঙ্কিত। অপর এক আবাসিক তপনকুমার গড়াই বলেন, আমার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ১০হাজার টাকা ও পাঁচ-ছ’ভরি রুপোর গয়না চুরি গিয়েছে। এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। অভিযোগ জানানোর পরও পুলিসের মধ্যে কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। এই আবাসনে ১৭৮টি ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু তারজন্য মাত্র ১০জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। কোনও সিসি ক্যামেরাও নেই, যা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। সোনার তরী ফেজ-টু এর ম্যানেজার সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, পুলিসকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি। শান্তিনিকেতন থানার এক পুলিস অফিসার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে ওই আবাসনে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছি। - নিজস্ব চিত্র