• জঙ্গলমহলে মিষ্টি জলের শামুকের শরীর থেকে মিলল মাইক্রোপ্লাস্টিক
    বর্তমান | ০৮ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: জঙ্গলমহল জুড়ে শামুকের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন বাজারে দেদার বিক্রি হয় সেই শামুক। দরিদ্র মানুষের পুষ্টি ও খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে শামুক। সেই মিষ্টি জলের শামুকের শরীরেই মিলল মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি। জানা গিয়েছে, মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়, কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ওড়িশা রাজ্যের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এনআইটি) উদ্যোগে গবেষণায় এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। ঝাড়গ্রাম জেলার একাধিক মাছের বাজার থেকে স্যাম্পেল উদ্ধার করে প্রায় তিন বছর ধরে চলেছে গবেষণার কাজ। ইতিমধ্যেই একটি জার্নালে সেই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই ঘটনা সামনে আসতেই উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল। কারণ, এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের ফলে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন সাধারণ মানুষ।

    পরিবেশবিদ অধ্যাপক প্রভাতকুমার শীট বলেন, মানব স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ছাড়াও মাইক্রোপ্লাস্টিক জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ প্রজাতির এই শামুক প্রাকৃতিক বায়োফিল্টার হিসেবে নদীর পরিবেশকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

    মহাবিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গবেষণার কাজটি করার জন্য ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম শহর, জামদা, নয়াগ্রাম, লালগড় ও বেলপাহাড়ী থেকে ৩৭৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই বাজার এলাকা থেকে মিষ্টি জলের শামুক সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। তবে প্রশ্ন, গবেষণার কাজটি কীভাবে হয়েছে? জানা গিয়েছে, বাজার থেকে প্রথমে জীবিত শামুক এনে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে রাখা হয়। শামুক নিয়ে আসার জন্য কুলার বাক্সের ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর সেগুলি মাইনাস ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক বিশ্লেষণের জন্য প্রস্তুত করা হয়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ৫ মিলিমিটারের কম আকারের এই প্লাস্টিক কণা পরিবেশ দূষণে বিশেষভাবে সক্ষম। একইসঙ্গে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানবদেহের শরীরে প্রবেশ করলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষণার প্রাথমিক ধাপে ৪০ গুণ বর্ধিত স্টেরিওমাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিকের চিহ্নিতকরণ করা হয়। ৩৭৩টি শামুকের দেহের ওজন ছিল ২৪ থেকে ৫৮ গ্রাম। একইসঙ্গে তাদের দৈর্ঘ্য ছিল ৪.৫ থেকে ৮ সেন্টিমিটার। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাক্ট-এ প্রতি গ্রামে গড়ে ৩.৭৬টি ও পেশি টিস্যুতে প্রতি গ্রামে ১.৪৮টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ছিল। আকার, রং ও আকারের দিক থেকেও এই কণাগুলি বৈচিত্র্যময়। পাশাপাশি স্থানভেদেও দূষণের মাত্রায় বড় পার্থক্য দেখা গেছে। ৩৭৩টি নমুনার মধ্যে ৩০২টিতে (৮০% এর বেশি) মাইক্রোপ্লাস্টিক ধরা পড়েছে। ঝাড়গ্রামের জামদা বাজার এলাকা থেকে সংগৃহীত শামুকে সর্বোচ্চ মাত্রার মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে নয়াগ্রাম বাজার থেকে সংগৃহীত নমুনায় সর্বনিম্ন। এনিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন গবেষকরাও। কারণ শামুকের মাধ্যমে সরাসরি মানুষের খাদ্যচক্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করবে। অধ্যাপক সুজয় মিদ্যা বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানব শরীরের মানব দেহের ফুসফুস ও অন্ত্রের টিস্যুতে পৌঁছে যেতে পারে। এরফলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, প্রদাহ, জেনেটিক ক্ষতি ও কোষ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ক্যান্সার রোগীদের ফুসফুসে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়।

    মেদিনীপুরের চিকিৎসক রাজীব দে বলেন, যেকোনও ধরনের দূষিত পদার্থ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সাধারণ মানুষকে আরও সতর্ক হতে হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)