দাসপুরের পোলিও আক্রান্ত যুবতী রক্তদান শিবিরে গিয়েই খোঁজ পেলেন জীবনসঙ্গীর
বর্তমান | ০৮ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, ঘাটাল: জীবনে স্বপ্ন দেখার কথা কখনও ভাবেননি মানা। কেননা তিনি ছোটোবেলায় পোলিওতে আক্রান্ত হয়। কোনওরকমে বেঁচে থাকাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র সত্য। দাসপুর থানার দরি অযোধ্যার মানা পোড়ে কখনও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেননি। হামাগুড়ি দিয়েই নিজের সব কিছু করে নিতেন। তাই বিয়ে বা সংসারের স্বপ্ন দেখার সাহস পাননি। কিন্তু কিছুদিন আগে সেই অসম্ভব ব্যাপারটিই সত্য হয়ে উঠল। মানা গিয়েছিলেন এক রক্তদান শিবিরে রক্ত দিতে। সেখানেই তাঁর জীবনে উদয় হল নতুন সূর্য। দিব্যাঙ্গ যুবতীকে রক্তদান করতে দেখে অভিভূত একজন সুস্থ সবল যুবক মানার অধরা স্বপ্নকে পূরণ করতে এগিয়ে এসে তাঁকে বিয়ে করলেন। ওই যুবকের নাম শ্রীমন্ত মাইতি। শুক্রবার তাঁদের চার হাত এক হওয়ার ঘটনা সবার মুখে মুখে ঘুরছে। মাত্র দেড় বছর বয়সে মানার দু’পায়ে ছোবল মারে পোলিও। আজও তিনি হামাগুড়ি দিয়েই চলাফেরা করেন, চার হাত-পায়ে ভর করে রোজকার কাজ সারেন। সেই লড়াইয়ের মধ্যে মানার রয়েছে রক্তদানের প্রতি এক অদ্ভুত টান। এলাকার যেখানেই রক্তদান শিবির হয়, কাউকে পাশে নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ঠিক হাজির হয়ে যান তিনি। এমনই একটি রক্তদান শিবিরে গিয়ে পাল্টে গেল তাঁর জীবন। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয় মানার রক্তদান নিয়ে একটি প্রতিবেদন। সেটাই ভিন রাজ্যে বসে দেখে ফেলেন মানার ছোটবেলার সহপাঠী শ্রীমন্ত। একসঙ্গে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তাঁরা। শ্রীমন্ত বলেন, তবে তখন তাদের মধ্যে কোনও বিশেষ সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা জয় করে রক্তদানের মানসিকতা দেখে মানার প্রতি আমার মনে তৈরি হয় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অনুভব।
তারপরই ফোনে যোগাযোগ, কথা থেকে আলাপ এবং ধীরে ধীরে সেই আলাপ গড়িয়ে যায় ভালোবাসায়। দু’জনে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বাকি জীবন একসাথে কাটাবেন। তবে মানার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সহজভাবে নিতে পারেননি শ্রীমন্তর পরিবারের সদস্যরা। মানা বলেন, তাঁরা এই সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকার করেন। শ্রীমন্তর বাড়ির অমতেই শুক্রবার তাঁদের অনুষ্ঠান করেই বিয়ে হয়।
মানা এখনও বাপের বাড়িতেই থাকেন। কারণ একসময় পরিবারের সদস্যরাও ভেবে নিয়েছিলেন, হয়তো তাঁর বিয়ে হবে না কোনওদিন। তাই মানার ভাই সঞ্জয় পোড়ে তাঁকে উপহার দেন একটি পাকাবাড়ি, সঙ্গে দেড় বিঘে জমি, যাতে বোন নিজের মতো বাঁচতে পারেন, কারও ওপর নির্ভর না করেই। এখন সেই বাড়িতেই তাঁদের ছোট্ট সাজানো সংসার। শ্রীমন্ত কিছুদিন পর কাজে চলে যাবেন বাইরে, তবে ফিরে আসবেন বারবার তাঁদের ছোট অথচ ভালোবাসায় পূর্ণ সংসারের টানে। মানা বলেন, ওই রক্তদানই তো আমাদের মিলিয়ে দিল। আবার রক্ত দিতে যাব, তবে এবার স্বামীর হাত ধরে।