ঘটনার দু’দিন আগে সহকর্মীর স্বামী খুনের হুমকি দিয়েছিল দেব সিংকে
বর্তমান | ০৮ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: রাস্তায় নলি কেটে বাইক আরোহীকে খুন করা হয়। ৫০ মিটার রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল রক্ত। নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পরও অধরা দুষ্কৃতীরা। যদিও উঠে এসেছে নতুন ‘ক্লু’। দেব সিং খুন হন বুধবার। সোমবার তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল অফিসের এক মহিলা সহকর্মীর স্বামী। পুলিসের কাছে সেই তথ্য তুলে ধরেছেন দেবের অফিসের সহকর্মীরাই। অন্যদিকে দেবের প্রেমিকাও হাজির হয়েছিলেন কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে। তাঁকেও একপ্রস্থ জেরা করেছে পুলিস। দেব অফিস থেকে তাঁকে বাইকে চাপিয়েই বের হয়েছিলেন। পরিবারের লোক প্রথম থেকেই দাবি করেছেন, এর পিছনে প্রেমিকার ভূমিকা রয়েছে। যদিও পুলিস বিকল্প সূত্রগুলি নিয়েও তদন্ত করছে। সেখানেই তাঁর অফিসের সহকর্মীদের ভূমিকা পুলিসের আতস কাচের তলায়।
এসিপি কুলটি জাভেদ হোসেন বলেন, খুনের ঘটনায় দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মৃতের প্রেমিকা, সহকর্মী সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দ্রুত প্রকৃত ঘটনা সামনে আনা হবে।
হাড়হিম এই হত্যাকাণ্ডের রেশ রয়ে গিয়েছে। সীতারামপুর-এথোড়া রাস্তার উপর যুবককে কীভাবে খুন করা হল, তা জানার আগ্রহও রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। খুনের ঘটনায় প্রেমিকা তত্ত্বের পাশাপাশি এদিন উঠে এসেছে আরও একটি নতুন সূত্র। মৃত ব্যক্তি কাজ করতেন একটি নির্মাণ সংস্থার অফিসে। সেখানেই এক মহিলা সহকর্মী হঠাৎ তাঁদের বিভিন্ন অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে লেফট করে যান। বিষয়টি জানতে তাঁকে ফোন করেন দেব। তখনই তাঁকে গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ মহিলার স্বামীর বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে খুনের দু’দিন আগে। পুলিসের কাছে এসে বিষয়টি জানিয়েছেন সংস্থার মালিক সহ অন্যান্য সহকর্মীরা। অফিস পলিটিক্সেরও গন্ধ পাওয়া গিয়েছে। মৃতের পরিবারের দাবি, নির্মাণ সংস্থাটিতে দু’জনের মালিকানা ছিল। রিয়া রাউ ও শ্যামল মণ্ডল। মৃতের পরিবারের দাবি, রিয়া রাও অত্যন্ত ভরসা করতেন দেবকে। তাই তাঁর পদোন্নতিও হচ্ছিল দ্রুত। অনেকেই বিষয়টি ভালো চোখে দেখতেন না। কয়েকদিন আগেই মারা গিয়েছেন রিয়া রাও। তারপরই দেব খুনে অনেকেই রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন।
শ্যামল মণ্ডল বলেন, দেব অত্যন্ত কর্মনিষ্ঠ ছেলে ছিল। আমরা পুলিসকে সব রকম তথ্য দিয়ে সাহায্য করছি। আমি চাই প্রকৃত খুনি শাস্তি পাক। অন্যদিকে সহকর্মী, সহকর্মীর স্বামীর ভূমিকা পুলিসের নজরে থাকলেও প্রেমিকার ভূমিকা বার বার উঠে আসছে। সহকর্মী থেকে মালিকদের দাবি, ঘটনাটি তাঁদের প্রথম জানিয়েছিলেন তাঁর প্রেমিকাই। এমনকী মৃতের পরিবারেও প্রেমিকাই প্রথম ফোন করেছিলেন। ঘটনার পর ওই সংস্থার অফিস খুললেও দেবের প্রেমিকা অফিসে আসেননি। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও ফোন ধরেননি।
মৃতের বাবা দিলীপ সিং বলেন, মেয়েটি যদি কিছুই না জানে, তাহলে সে কেন ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক অস্বীকার করছে। এদিন আমরাও শুনেছি একজন ওকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল। আমার প্রকৃত বিচার চাই।
প্রসঙ্গত, বুধবার সন্ধ্যায় নির্মাণ সংস্থার অফিস থেকে বাইকে করে প্রেমিকাকে নিয়ে নিয়ামতপুর আসেন দেব। প্রতিদিনই তিনি প্রেমিকাকে বাড়ি পৌঁছনোর জন্য এই রাস্তা ধরেই আসেন। সেই রাস্তার উপরই ওইদিন রাতে তাঁর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়।