• সেক্স র‍্যাকেটে ‘না’, সোদপুরের যুবতীকে আটকে রেখে নির্যাতন, পরিবার সহ বেপাত্তা ডোমজুড়ের অভিযুক্ত যুবক
    বর্তমান | ০৮ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: কাজের টোপ দিয়ে সেক্স র‌্যাকেটে নামানোর চেষ্টা। মানতে না চাওয়ায় শুরু হয় ‘তালিবানি’ নৃশংসতা। কর্মপ্রার্থী সোদপুরের এক যুবতী নন্দিতাকে (নাম পরিবর্তিত) হাওড়ার ডোমজুড়ের বাঁকড়ার এক ফ্ল্যাটে টানা পাঁচমাস আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে ফেসবুক ফ্রেন্ড আরিয়ান খান নামে এক যুবক, তার মা শ্বেতা খান ও বোন জোয়া খান। ১৫০ দিনের বেশি এই পাশবিকতা পর্বে নির্যাতন চালানোর জন্য খান পরিবার কখনও ব্যবহার করেছে লোহার রড, কখনও শিলের নোড়া আবার কখনও ধারালো কাটারি। রোজ  দিনে ও রাতে রুটিন করে অত্যাচার চালানো হতো। ওই যুবতীর শরীরের এমন কোনও অংশ বাকি নেই, যেখানে নৃশংস অত্যাচারের চিহ্ন ছিল না। চুল কাটা, দাঁত ভাঙা, গোপনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত, গোটা শরীর আঘাতে জর্জরিত। খান পরিবার হুমকি দিয়েছিল—এবারের বকরি ঈদে ‘কুরবানি’র পশু হবে নন্দিতাই। 

    অত্যাচার, মারধর আর সন্ত্রস্ত এহেন জীবনযাত্রার মাঝেই সুযোগ মেলে গত শুক্রবার (৬ জুন) ভোরে। গোটা খান পরিবার তখন ঘুমন্ত। কোনওক্রমে সেই ‘কারাকুঠুরি’ থেকে পালাতে সক্ষম হন নন্দিতা, চলে আসেন সোদপুরের বাড়িতে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুক্রবার বিকেলে খড়দহ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন নন্দিতার মা। যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে খড়দহ এবং ডোমজুড় থানার পুলিস। পলাতক গোটা খান পরিবার। নন্দিতার বিষয়টি সামনে আসা মাত্রই ‘তালিবানি’ নৃশংসতার সঙ্গে যুক্তদের অবিলম্বে আইনের হেফাজতে নিয়ে কড়া শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থায় কাজ করতেন নন্দিতা। সেই সূত্রেই ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বাঁকড়ার যুবক আরিয়ান খানের সঙ্গে। নন্দিতাকে ভালো কাজের টোপ দেয় আরিয়ান। এরপর গত বছরের শেষ দিন (৩১ ডিসেম্বর) নন্দিতাকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় সে। প্রস্তাব দেওয়া হয়, পানশালায় কাজ করার জন্য। একইসঙ্গে ‘সেক্স র‌্যাকেটে’ যুক্ত হওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। আপত্তি জানান নন্দিতা। ওই ফ্ল্যাটে আটকে রেখে সেদিন থেকেই শুরু হয় তালিবানি কায়দায় অত্যাচার।

    যুবতীর অভিযোগ, তাঁকে দিনের পর দিন অভুক্ত অবস্থায় ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। লোহার রড দিয়ে মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। ভাঙা হয় দাঁতও। চুল কেটে নেওয়া হয়। আরিয়ানের মা শ্বেতা খান ও বোন জোয়া খান গোপনাঙ্গে কাটারি দিয়ে আঘাত করে। খড়দহ থানার পুলিস জানিয়েছে, নির্যাতিতা যুবতীর বক্তব্যের ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থল যেহেতু ডোমজুড়ে তাই সমস্ত নথি খড়দহ থানা থেকে ডোমজুড় থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডোমজুড় থানা তদন্ত শুরু করেছে। তবে অভিযুক্তরা পালিয়ে গিয়েছে। আরিয়ান ও তার মায়ের বিরুদ্ধে এর আগেও সেক্স র‌্যাকেট চালানোর অভিযোগ ছিল বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে। তারা গ্রেপ্তারও হয়েছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)