এই সময়, কালনা: গুজরাটের রাজকোটে ইমিটেশন জুয়েলারির কারখানায় কাজ করতে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনওরকমে বাড়ি ফিরেছিল কালনার উপলতির বাসিন্দা বছর বারোর এক কিশোর।
সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পর গত ৬ জুন গুজরাট পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ও অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ইউনিট ওই রাজ্যের রাজকোটের একটি বাড়ি থেকে শিশু ও কিশোর মিলিয়ে ১৯ জনকে উদ্ধার করেছে।
তাদের বেশিরভাগেরই বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলায়। পূর্ব বর্ধমান জেলার বাসিন্দা বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি এই শিশু ও কিশোরদের সেখানে নিয়ে গিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটি জুয়েলারির কারখানায় কাজ করাতো বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, চরম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকা ওই অল্পবয়সী শ্রমিকদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১২ জন নাবালক। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই গুজরাট পুলিশ এই অভিযান চালায়।
এই ১৯ জনের সঙ্গেই কালনার বাড়িতে ফিরে আসা নাবালক একই জুয়েলারি কারখানায় কাজ করত কি না, সে বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেনি কালনা মহকুমা পুলিশ।
কালনার এসডিপিও রাকেশ চৌধুরি শুধু বলেছেন, ‘আমাদের একটা টিম ওখানে গিয়েছে। গুজরাট পুলিশের সহযোগিতায় ওখানে তদন্ত করছে। এখনই কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। বলার মতো অবস্থায় এলে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গত, কালনায় বাড়িতে ফিরে এসেছে যে কিশোর, তার হাত, পিঠ, মাথা–সহ শরীর জুড়ে অজস্র আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। কালনারই শিকারপুরের এক ব্যক্তি তাকে রাজকোটে নিয়ে গিয়েছিল। তাকে লোহার রড দিয়ে প্রায়ই মারধর করা হতো বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই কিশোরকে সেখানে কাজে যুক্ত হুগলির এক বাসিন্দার মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানো হয়।
কালনা মহকুমা পুলিশ সূত্রে খবর, রাজকোটে উদ্ধার হওয়া শিশু শ্রমিকদের কাছ থেকে গুজরাট পুলিশ জানতে পেরেছে, তাদেরও লোহার রড দিয়ে মারা হতো। অনেকের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদের সকাল নটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত দশ ঘন্টার বেশি কাজ করানো হতো। এমন ঘটনা এর আগেও গুজরাটে ঘটেছে। গত এপ্রিলেই জেতপুরের একটি কাপড়ের কারখানা থেকে ৩১ জন শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছিল।
কালনার বাঘনাপাড়ার জঙ্গলপাড়ার এক কিশোরও আট বছর আগে কাজ করতে রাজকোটে গিয়েছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে তার পরিবার। কয়েক বছর ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না পরিবার।