• কোভিড কি ফের দুয়ারে? বিপদ মোকাবিলার প্রস্তুতি কেমন উত্তরবঙ্গে?
    এই সময় | ০৮ জুন ২০২৫
  • এই সময়: ফের করোনার ভ্রূকুটি দেশে। ইতিমধ্যে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০-র আশপাশে। কেরালা ও গুজরাটের পরেই এক কোভিড পজ়িটিভ রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গের ছবিটা এখনও তেমন উদ্বেগের না হলেও বিপদ মোকাবিলার প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।

    করোনা নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই বলে মনে করেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। সম্প্রতি দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

    চিকিৎসকদের দাবি, নয়া স্ট্রেনের সংক্রামক ক্ষমতা খুব বেশি হলেও মারণ ক্ষমতা তত নয়। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল ছাড়াও সব জেলাতেই করোনা পরীক্ষার পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। এখনও পর্যন্ত শিলিগুড়িতে একজন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।

    উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চিকিৎসক করোনা ‘পজ়িটিভ’। তাঁর লালারসের নমুনায় করোনা নিশ্চিত হওয়ার পরে তিনি হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। দিন কয়েক আগেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক হয়।

    সেখানে করোনা সংক্রমণের চিকিৎসা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেছেন, ‘করোনার চিকিৎসার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুরোপুরি প্রস্তুত। ওয়ার্ড তৈরি করাই আছে। আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।’

    ধীরে ধীরে করোনা বাড়ছে দক্ষিণবঙ্গে। রাজ্যে ইতিমধ্যে মৃত্যুর খবরও এসেছে। সেই অনুযায়ী উত্তরবঙ্গে ধীরে হলেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সব জেলাকেই সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে এখনও জলপাইগুড়ি জেলায় কোনও রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমনটাই জানিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার।

    তিনি বলেন, স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে কয়েকদিন আগেই নির্দেশে এসেছিল। এই নির্দেশ পাওয়ার পরে তৎপরতা বেড়েছে। অসীমা জানিয়েছেন, কোভিডের পুরোনো পরিকাঠামোকে সংস্কার করার কাজ শুরু করা হয়েছে। ডেঙ্গির পাশাপাশি কোভিড নিয়ে ফিভার ক্লিনিকগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।

    সিসিইউতে পর্যাপ্ত বেড, অক্সিজেনের ব্যবস্থা দেখে নেওয়া হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজে অক্সিজেন প্লান্ট থাকায় কোনও সমস্যা হবে না বলে দাবি স্বাস্থ্য কর্তার। সর্দি–কাশি–জ্বরের প্রকোপ গ্রীষ্মের শেষে বাড়ছে।

    উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। এর ফলে রক্ত পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ছে। কোভিড পরীক্ষার জন্য সব ল্যাবরেটরি অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়। থানা মোড়ের ল্যাবরেটরির কর্ণধার সুজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘অনেক রোগী জ্বর হওয়ার পরে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। জ্বর হলে ডেঙ্গি সন্দেহ করা হচ্ছে। সে সব পরীক্ষা আমরা করাচ্ছি।’

    চিকিৎসক সৌমেন সাহা জানিয়েছেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তের কারণে বহু মানুষ জ্বরের চিকিৎসা করাতে আসছেন। কয়েকজন ডেঙ্গির লক্ষণ নিয়ে এসেছিলেন। তবে এখনও পর্যন্ত করোনা রোগী পাওয়া যায়নি।’

    এখনও পর্যন্ত করোনা–মুক্ত রয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা। মালদার পরে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে করোনা আক্রান্তের হদিশ মেলায় ভয় বাড়ছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, জেলায় এখনও কেউ ‘পজিটিভ’ নন।

    জেলার প্রধান তিন হাসপাতালের মধ্যে জেলা হাসপাতাল, ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি ও বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে গত ১৫ দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে কেউ ভর্তি হননি বলে জানান জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক–২ সুপ্রিয় চৌধুরী।

    তবে জেলা হাসপাতালের সুপার পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ‘এখনও কারও কোভিড ধরা পড়েনি। তবে এটাও ঠিক যে, পরীক্ষাও শুরু করা হয়নি। লালারস টেস্ট শুরু করা হলে কতজন পজিটিভ হবেন, সেটা আগাম বলা সম্ভব নয়।’

    জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও করোনার পরীক্ষা জেলার হাসপাতালে কবে শুরু হবে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। লালারস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ‘কিট’ সরকারি হাসপাতালে চলে এসেছে।

    জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত উত্তর দিনাজপুরে কেউ কোভিড আক্রান্ত হননি। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও ইসলামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কোভিড আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি।

    জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘জেলায় কেউ কোভিড আক্রান্ত না হলেও এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। সরকারি গাইডলাইন মেনে আমরা সমস্ত রকম ব্যবস্থা রেখেছি।’

    রায়গঞ্জের চিকিৎসক শান্তনু দাস বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে করোনা সংক্রান্ত কোনও কেস আসেনি। জ্বর, সর্দি, কাশি, মুখের স্বাদ চলে যাওয়া, গন্ধ না পাওয়ার মতো করোনার লক্ষণ কারও মধ্যে দেখতে পাইনি।’

    চিকিৎসক জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি। ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)