• অসমের গামছা হাতিয়ার কালনার তাঁতশিল্পীদের
    এই সময় | ০৮ জুন ২০২৫
  • সূর্যকান্ত কুমার, কালনা

    নানা সমস্যায় জর্জরিত তাঁতশিল্পীরা। তাঁদের নতুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে পড়শি রাজ্য অসমের গামছা ও উত্তরীয়। তাকে আঁকড়ে ধরেই কালনার তাঁতশিল্পীরা বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করছেন।

    মিলছে ভাল মজুরি। তাঁতশিল্পীদের মধ্যে বাড়ছে বিশেষ এই গামছা বোনার প্রবণতাও। নাদনঘাটের নসরতপুরের বেশ কিছু তাঁতশিল্পী গামছা বুনে নিয়মিত পাঠাচ্ছেন অসমে।

    কালনা মহকুমার কয়েক হাজার মানুষ তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। নানা সমস্যায় জর্জরিত তাঁতশিল্পীদের নাভিশ্বাস ওঠার দশা! ধাত্রীগ্রাম এবং শ্রীরামপুরে দু’টি সরকারি তাঁত-হাট গড়ে তোলার পাশাপাশি নানা ভাবে তাঁতিদের পাশে রাজ্য সরকার দাঁড়ালেও সঙ্কট কিছুতেই কাটছে না। তবে শাড়ির বাজার মিললে যে সঙ্কট দূর হতে পারে, তা অনুভব করেছেন তাঁতিরা।

    ফলে প্রথাগত বাংলার তাঁতের শাড়ির বদলে কিছু তাঁতশিল্পী বুনতে শুরু করেছেন অসমের গামছা। এই সিদ্ধান্তে পাল্টেছে ছবি। গামছা হয়েছে জনপ্রিয়। মহাজনরা সেই গামছা কিনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন অসমে।

    এখানে গামছা বুনতে মজুরি অপেক্ষাকৃত কম লাগায় লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। ফলে কোমর সোজা করে উঠে দাঁড়ানোর একটা শক্ত অবলম্বন পেয়েছেন তাঁতশিল্পীরা।

    নসরতপুরের তাঁতি সুনীল বসাক বলছিলেন, ‘আমরা যে তাঁতের শাড়ি বুনি, তার বাজার এখন খারাপ। একটা শাড়ি বুনে বর্তমানে ১০০ টাকা মজুরিও মেলে না। এক মহাজনের মাধ্যমে অসমের গামছা বোনার বরাত পেয়েছিলৈম। তারপর থেকে এখন ওই অসমের গামছাই বুনছি। এলাকার অনেকেই এই গামছা বুনছেন এখন।’

    সজীব বসাক নামে আর এক তাঁতির বক্তব্য, ‘পাওয়ারলুমেও এই গামছা বুনছেন অনেকে। হ্যান্ডলুমে দিনে তিন-চারটি গামছা বোনা গেলেও পাওয়ারলুমে দিনে দশ থেকে বারোটা গামছা বোনা যায়। গামছা পিছু ৩৫ টাকার মতো মজুরি মেলে।’

    আর এক তাঁতশিল্পী সত্যরঞ্জন বসাকের কথায়, ‘বাংলার তাঁতের মতোই এই গামছা বুনতে হয়। তাই অসুবিধা হচ্ছে না। মহাজন সুতো দিয়ে দেন। তাঁতের গামছা বোনা ছাড়াও নানা ধরনের কাজ থাকে।

    তার জন্যও লোক লাগে। ফলে অনেকেই এখন কাজ পাচ্ছেন। অসমে গামছা বুনতে যা মজুরি লাগে, এখানে তার থেকে কম মজুরি লাগায় আমাদের অর্ডার বাড়ছে। কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি।’

  • Link to this news (এই সময়)