একা কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা মোদির! কাশ্মীরে রেলভাবনা শুরু মমতারই, বলছে তৃণমূল
প্রতিদিন | ০৮ জুন ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: কালের নিয়মে প্রকল্প শেষ হতেই কাশ্মীরে চেনাব রেল সেতু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করলেও ১৭ বছর আগে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সংসদে রেল বাজেটের বক্তৃতায় এই ঐতিহাসিক প্রকল্পের পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চেনাব নদীর উপর রেল সেতু গড়ে কাটরা-কাজিগুন্ড রেল লাইনের সূচনা কার্যত সেদিনই করে দেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সেদিন ২০০৯ সালের বাজেট বক্তৃতায় সংসদে তৎকালীন রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, “কাশ্মীরের রেল পরিকাঠামো বিস্তৃতি একাধিক প্রকল্প যেমন বাস্তবায়িত হবে, তেমনই শীঘ্রই অনন্তনাগ-কাজিগুন্ড অংশটি উদ্বোধন হবে।” স্পষ্ট কথায়, ভারতীয় রেল মানচিত্রে কাশ্মীরের চেনাব রেলপ্রকল্প দেশবাসীকে চিনিয়েছেন মমতাই।
রেলবাজেটে ঘোষণার কিছুদিন পরই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীরের অনন্তনাগ-কাজিগুন্ড অংশে ট্রেন চলাচলের সূচনা করেন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঐতিহাসিক সরকারি কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কাশ্মীরের প্রাক্তন ও বর্তমান দুই মুখ্যমন্ত্রী, ফারুখ এবং ওমর আবদুল্লাও। প্রধানমন্ত্রী মোদি যে রেল সেতু ও লাইনের উদ্বোধন করেছেন, সেটি ২০১০ সালের বাজেট বক্তৃতায় তার আগের বছরের পর্যালোচনা রিপোর্ট উল্লেখ করে প্রকল্প অনুমোদন করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি সংসদে ঘোষণা করেন, এবার কাশ্মীরবাসীকে আধুনিকতম রেল পরিষেবা পৌঁছে দিতে উধমপুর-কাটরা অংশের কাজ জোরকদমে শুরু হচ্ছে। সংসদে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতার পুরনো বাজেট বক্তৃতা এবং প্রশ্নোত্তরপর্ব তুলে ধরে শনিবার চেনাব রেল সেতু মোদি উদ্বোধন করলেও কাশ্মীরে রেলের বিস্তৃতির ভাবনা যে তৃণমূল নেত্রীর, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “কালের নিয়মে, প্রকল্প শেষ হতে সময় লেগেছে, তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চেনাব রেল সেতু উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু ভারতীয় রেলের নথি, ইতিহাস ও সংসদের তথ্য বলছে এই ঐতিহাসিক প্রকল্পের সূচনা এবং ভূস্বর্গে আধুনিক রেল পরিকাঠামোর বিস্তৃতির ভাবনা সম্পূর্ণরূপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।”
কাশ্মীরে রেল পরিকাঠামোকে আরও বিস্তৃতি করার পাশাপাশি রেল কেন্দ্রিক একগুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়নেরও মূল ভাবনা ও কাজ শুরু রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমনকী, ২০১১ সালে রেলের বাজেট বক্তৃতায় জম্মু ও কাশ্মীরে ব্রিজ ফ্যাক্টরি এবং জম্মুতে ইনস্টিটিউট ফর টানেল অ্যান্ড ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়। কারণ, ওই এলাকায় রেল লাইন পাতার জন্য পাহাড় কেটে কেটে অনেকগুলি টানেল নির্মাণের প্রয়োজন ছিল। বস্তুত সে কথা মাথায় রেখেই কাশ্মীরে একটি ইনস্টিটিউট ফর টানেল অ্যান্ড ব্রিজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা। রেল মানচিত্রে চেনাব প্রকল্প দেশবাসীকে চিনিয়ে দেওয়ার দু’বছর পর ২০১২ সালে তৃণমূল নেত্রী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিলেও রেলমন্ত্রক তৃণমূলের হাতেই ছিল। আর তখন সেই রেল বাজেটও পুরোপুরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনায় পেশ হয়েছিল।
নেত্রীর নির্দেশ মেনেই সেদিন সংসদে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী কাশ্মীরের একাধিক রেল প্রকল্প বৈদ্যুতিকীকরণ খাতে ৮২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। এ ছাড়াও দুবছর আগে মমতার ঘোষিত ভূস্বর্গের পাশাপাশি বাংলার রেল প্রকল্পগুলিতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী। বস্তুত এই কারণে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “চেনাব রেল সেতু নিয়ে যতই প্রধানমন্ত্রীকে তুলে ধরে বিজেপি নির্লজ্জভাবে ঢাক পেটাক না কেন, সংসদের রেকর্ড মেনে নিয়ে এ কথা সকলকেই স্বীকার করতে হবে প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই। অথচ প্রধানমন্ত্রী মোদি চেনাব-সেতু নিয়ে একা কৃতিত্ব নিতে গিয়ে বেমালুম চেপে গিয়েছেন রেলমন্ত্রী মমতার হাত ধরে প্রকল্প শুরুর কথা। চেপে গিয়েছেন ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে যে প্রকল্পটি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষজ্ঞ টিম পর্যালোচনা করতে গিয়েছিল।’’
চেনাব রেল প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে একক কৃতিত্ব জাহির করছেন, তা খণ্ডন করে এদিন দিল্লিতে ৬ দফা তথ্য তুলে ধরেছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। বলেছেন, “বিশ্বের উচুতম রেল সেতু এবং প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম অর্থবরাদ্দ করেছিলেন। গোটা কাশ্মীরে রেল প্রকল্পের বিস্তৃতি ও ট্রেন লাইনগুলিকে নতুন জীবন দান করার প্রধান কারিগর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। সংসদের তথ্য বলছে, ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর কাজিগুন্ড-বারামুলা রেল লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু করান তৃণমূল নেত্রী। প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত অর্থ হিসাবে ১৯৪৯ কোটি টাকা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সব তথ্য সংসদে থাকা সত্ত্বেও নির্লজ্জভাবে নিজের ক্রেডিট জাহির করেছেন প্রধানমন্ত্রী।” কলকাতায় নতুন লাইনে মেট্রো রেলের জমি পাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমি রাজ্য সরকারই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। দু-একটি ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা বক্তব্য ও দাবি রয়েছে। সেগুলি সরকার দ্রুত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। তবে বিজেপির নেতৃত্বে চলা কেন্দ্রীয় সরকার যে কলকাতার মেট্রোয় প্রতিবছর বাজেটে নামমাত্র বরাদ্দ করছে, সেটা গেরুয়া শিবির যেন মনে রাখে।”