এই সময়: এতদিন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ-ই ছিলেন বঙ্গ-বিজেপির ‘প্রায়োরিটি লিস্টে’। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আবহে সেই তালিকায় এ বার নতুন সংযোজন রাজনাথ সিং। তাঁকেও ভোট–প্রচারে চাইছেন বাংলার পদ্ম নেতারা। চলতি বছরের শেষে বিহারের বিধানসভা ভোটের প্রচারেও চরকি কাটতে দেখা যাবে উত্তরপ্রদেশের এই দুঁদে বিজেপি নেতা তথা দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে।
রাজনাথ বিজেপির হেভিওয়েট নেতা হলেও গত এক দশকে মোদী–শাহ জুটির চাকচিক্যের কাছে তিনি অনেকটাই ম্লান। প্রধানমন্ত্রী অথবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজ্যে আনার জন্য বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে যে তৎপরতা দেখা যায়, তার সিকি ভাগও দেখা যায় না অন্য কারও ক্ষেত্রে।
‘অপারেশন সিঁদুর’ বিজেপির অন্দরের সেই সমীকরণ কিছুটা হলেও পাল্টে দিয়েছে। বিজেপি-র অনেকেই বলছেন, জাতীয় রাজনীতিতে মিসাইল গতিতে ‘কামব্যাক’ ঘটেছে রাজনাথের। তিনি এখন আর গেরুয়া শিবিরের ‘উপেক্ষিত হিরো’ নন, নরেন্দ্র মোদীর প্রধান সেনাপতি।
২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরের দিনই প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে টিভি ক্যামেরার সামনে এসেছিলেন রাজনাথ। দৃপ্তকণ্ঠে জানিয়েছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। এবং সেটা দেশের মানুষ কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারবে।
এর ঘণ্টাখানেক বাদেই পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু চুক্তি বাতিল করে ভারত। এ দেশে ভিসা নিয়ে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদেরও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়। দেশের মানুষ বুঝতে পারে, সামরিক দিক থেকেও পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
অর্থাৎ, ক্যামেরার সামনে এসে ফাঁকা আওয়াজ দেননি রাজনাথ। এরপরে প্রায় রোজই সেনা কর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে রাজনাথ আর মোদীকে। ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত-পর্বে রাজনাথের গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি।
ফলে তাঁর দর বেড়েছে বিজেপির অন্দরেও। পদ্ম নেতারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর সাফল্য বর্ণনা করছেন। সেখানে মোদীর পরে রাজনাথের ‘ডিমান্ড’–ই সব থেকে বেশি। আগামী ১০ জুন থেকে দেশজুড়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের ১১ বছরের কর্মকাণ্ড প্রচারের কৌশল নিয়েছে বিজেপি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে সরকারের ঢাক পেটাবেন। বাংলাতেও একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আসার কথা। এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা চাইছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বাংলায় পাঠানো হোক কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যের কথা বলতে।
পশ্চিমবঙ্গের এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার কথায়, ‘নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ বাংলায় এসে অপারেশন সিঁদুরের কথা বলে গিয়েছেন। আমরা চাই, এ বার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নিজে আসুন। তাঁর মুখ থেকে ওই অপারেশনের কথা বাংলার মানুষ শুনতে চায়।’
শনিবারই মালদার ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী দিল্লি গিয়ে রাজনাথকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর জন্য। তিনি বলেন, ‘ভারতের সামরিক ভাবে এতটা শক্তিশালী হওয়ার পিছনে রাজনাথজির ভূমিকা অনেকটাই। পহেলগামে জঙ্গিরা বহু মহিলার সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়েছে। দেশ ক্ষোভে ফুঁসছিল।
নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিং–রা প্রতিশোধ নিয়েছেন। দেশের মহিলাদের চোখের জল মুছেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তাই আমি দিল্লি গিয়ে রাজনাথ সিংকে ধন্যবাদ জানিয়ে এসেছি।’ সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে বঙ্গ–বিজেপির একটি প্রতিনিধি দলও খুব শিগগিরই দিল্লি যেতে পারে।
এমনিতে রাজনাথ বিজেপির তারকা প্রচারক। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানা থেকে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে তিনি প্রচার করতেও যান। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, আসন্ন বিহার ভোটে মোদী-শাহের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে রাজনাথের নামও।
বিহার বিজেপির শীর্ষ নেতারা ইতিমধ্যেই দিল্লিতে দরবার করেছেন, একাধিক আসনে প্রচারের জন্য রাজনাথকে পাঠানো হোক। যাতে তিনি নিজের মুখে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা বলে বিরোধীদের বেকায়দায় ফেলতে পারেন।