• গোসাবার এক পঞ্চায়েত থেকে ৩৫০০ ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট!
    এই সময় | ০৮ জুন ২০২৫
  • এই সময়: দু’-দশটা নয়। পাসপোর্ট জালিয়াতির তদন্তে এখনও পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেটের হদিশ পেয়েছে কলকাতা পুলিশের সিকিউরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (এসসিও)। তাও আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি মাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেই ইস্যু করা হয়েছে এতগুলি ভুয়ো সার্টিফিকেট!

    ওই সব ভুয়ো সার্টিফিকেটের সাহায্যেই পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন প্রতারকরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশি। এই ঘটনা ‘গভীর উদ্বেগের’ এবং ‘জাতীয় ইস্যু’ বলে শনিবার মন্তব্য করলেন আলিপুর আদালতের বিচারক।

    জালিয়াতির ঘটনায় গোসাবা পঞ্চায়েতের চুক্তি-ভিত্তিক কর্মী গৌতম সর্দারকে আগেই গ্রেপ্তার করেছিল এসসিও। একটি মামলায় পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষের পরে অন্য একটি মামলায় ফের তাঁকে হেফাজতে পেতে শনিবার আলিপুর আদালতে আবেদন করেন তদন্তকারীরা।

    তদন্তকারী অফিসারদের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘গোসাবার একটি পঞ্চায়েত থেকে এতগুলি ভুয়ো সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে থাকলে এবং তার সুযোগ অনুপ্রবেশকারীরা নিয়ে থাকলে সেটা তো জাতীয় ইস‍্যু। সে ভাবেই তদন্ত করুন। আপনারা কী ভাবে বুঝছেন গৌতম সর্দার একাই এই ঘটনায় যুক্ত? ওই পঞ্চায়েতের প্রধানকে কি আপনারা ধোয়া তুলসীপাতা ভাবছেন?’

    এসসিও সূত্রে দাবি, পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় গার্ডেনরিচ, একবালপুর, ভবানীপুর থানা এলাকায় যে ক’জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই গৌতমের যোগসূত্র মিলেছে।

    তদন্তকারীরা দেখেছেন, আবেদনকারীরা যে বার্থ সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে পাসপোর্টের জন্যে আবেদন করেছিলেন, সেগুলি ভুয়ো। ওই জালিয়াতিরই নেপথ্যে রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের চুক্তি–ভিত্তিক কর্মী গৌতম।

    তিনি টাকার বিনিময়ে বার্থ সার্টিফিকেট তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন। আগেই গার্ডেনরিচ থানার মামলায় গৌতমকে গ্রেপ্তার করেছিল এসসিও। শনিবার আলিপুর আদালতে তাঁকে হাজির করা হলে ওই মামলায় তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। তবে এ দিনই ভবানীপুর থানার মামলায় গৌতমকে ‘শ্যোন অ্যারেস্টে’র আবেদন করেন তদন্তকারীরা।

    আদালতে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, ‘গৌতম বড় চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ভুয়ো নথি তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন। ৩৫০০ ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে।’

    এর বিরোধিতা করে অভিযুক্তের পক্ষে আইনজীবীরা বলেন, ‘যিনি পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন, তিনি জামিন পেয়ে গিয়েছেন। তা হলে আমার মক্কেলকে কেন আটকে রাখা হবে? তদন্তকারী অফিসাররা কি খতিয়ে দেখেছেন, ওই বার্থ সার্টিফিকেট অনলাইনে আপলোড হয়েছে কি না? যদি হয়, তা হলে কী ভাবে জালিয়াতি হলো? তা হলে কি তা ভুয়ো বলা যাবে?’

    তদন্তকারীদের উদ্দেশে বিচারকের প্রশ্ন, ‘আপনারা কি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন?’ তদন্তকারীরা জানান, পঞ্চায়েত প্রধান চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি জানেন না কী ভাবে হয়েছে।

    তখন বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘একটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে এতগুলি যদি ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়, তা হলে আপনারা কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন প্রধান জড়িত নন? পঞ্চায়েত প্রধানকে কি আপনারা ধোয়া তুলসীপাতা ভাবছেন?’ শেষ পর্যন্ত ভবানীপুরের মামলায় ১৩ জুন পর্যন্ত গৌতমের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

  • Link to this news (এই সময়)