সন্দীপ ঘোষ চৌধুরী: চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী রইল কাটোয়া থানার অন্তর্গত আমূল গ্রামের দাসপাড়া। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করার অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূ মিতা দাসের বিরুদ্ধে। মৃত স্বামী মহাদেব দাসের বয়স মাত্র ৩৩ বছর। এই ঘটনায় গোটা গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শনিবার গভীর রাতে বা রবিবার ভোররাতে ঘটে যাওয়া এই রহস্যজনক মৃত্যুর খবর মেলে রবিবার সকালে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালবেলা প্রতিবেশীরা মহাদেবের নিথর দেহ নিজের বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিসে খবর দেওয়া হলে, কাটোয়া থানার পুলিস এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং ময়না তদন্তের জন্য কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিস ও পরিবারের দাবি, মহাদেবের মাথার পিছনে এবং কানের পাশে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, যা মৃত্যুর কারণ হিসেবে মারাত্মক আঘাত। তবে ঠিক কী দিয়ে আঘাত করা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনার রাতে মহাদেবের স্ত্রী মিতা দাসও একই ঘরে ছিলেন। অথচ তিনি জানেন না তার স্বামীর মৃত্যু কীভাবে হল। গ্রামের মানুষজন ও আত্মীয়দের সন্দেহের কেন্দ্রে এসেছে। মৃতের ভাই জয়দেব দাস বলেন, 'একই ঘরে থাকা সত্ত্বেও বৌদি জানলেন না কীভাবে দাদা মারা গেলেন? এটা কীভাবে বিশ্বাস করি? এটা স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড।'
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ও পারিবারিক অশান্তির অভিযোগ জানিয়েছেন মহাদেবের এক আত্মীয় কেষ্ট দাস। তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরেই মিতা দাসের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। মহাদেব নিজেই তাদের জানিয়েছিলেন যে, তার স্ত্রী মিতা অন্য এক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছেন। এই নিয়ে দম্পতির মধ্যে প্রায়শই অশান্তি হত। গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, এই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ঘিরেই দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছায়। তাদের সন্দেহ, পরিকল্পনা করেই মিতা দাস বাইরের লোকজনকে ডেকে এনে স্বামীকে খুন করিয়েছে।
আইনগত পদক্ষেপ ও তদন্ত জানিয়ে মহাদেবের পরিবার ইতিমধ্যেই কাটোয়া থানায়। তারা মিতা দাস এবং তার বাবা-সহ অন্য অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুলিস জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদও শুরু হয়েছে। কাটোয়া থানার এক তদন্তকারী অফিসার জানান, 'ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড বলেই অনুমান করা হচ্ছে। ঘটনার পর গোটা গ্রামে আতঙ্ক এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা মিতা দাসের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সামাজিকভাবে এই ঘটনা আবারও সামনে এনেছে পারিবারিক অশান্তি ও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ভয়ংকর পরিণতির বিষয়টি। এই ঘটনা শুধু একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং সমাজে ঘনীভূত হওয়া সম্পর্কের টানাপোড়েনের একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। তদন্ত চলছে, এবং দোষী প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তির মুখোমুখি হবেন অভিযুক্তরা এমনটাই আশাবাদী এলাকাবাসী ও মৃতের পরিবার।