বিরল ভালভার ক্য়ানসারে আক্রান্ত বৃদ্ধা, জটিল অস্ত্রোপচারে জীবনদান পুরুলিয়ার হাসপাতালের
প্রতিদিন | ০৮ জুন ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দেশের নিরিখে ১ লাখ মহিলার মধ্যে দেড় থেকে দু’জনের ভালভার ক্যানসার হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যার পোশাকি নাম ‘স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা।’ জটিল অস্ত্রোপচারে সেই ভালভার ক্য়ানসারে আক্রান্ত রোগীর জীবনদান করল পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। ৬২ বছরের বৃদ্ধ মহিলার গোপনাঙ্গের বাইরের অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। যা দেবেন মাহাতো মেডিক্যালে এই প্রথম। তবে সমগ্র গোপনাঙ্গের শুধু বাইরের অংশ নয়। বাদ গিয়েছে পাশের লসিকা গ্রন্থিও। সেই সঙ্গে ওই গোপনাঙ্গের ভেতরের ২ সেমি। যা একেবারেই বিরল।
পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের আনাড়ার বাসিন্দা ৬২ বছরের পার্বতী দেবী। প্রায় ৪ মাস আগে তাঁর গোপনাঙ্গের বাঁদিকে লিবিয়ামেজরাতে ছোট সিস্ট ক্রমশ বেড়ে উঠতে থাকে। স্থানীয় চিকিৎসকদেরকে দেখালে স্বাভাবিকভাবে বায়োপসি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এবং সেই রিপোর্টে ধরা পড়ে ক্যানসার। তখনই স্থানীয় চিকিৎসকের তরফে বলা হয়, রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দিশাহারা হয়ে যায় ওই পরিবার। দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগে গত মে মাসে ওই বৃদ্ধ মহিলাকে নিয়ে যায় তার পরিবার। সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কর্কট রোগ বিশেষজ্ঞ অলোকদূত সরকারের তত্ত্বাবধানে ৬ সদস্যকে নিয়ে টিউমার মেডিক্যাল বোর্ড বসে। সেখানে ছিলেন অঙ্কোলোজি, গাইনো, জেনারেল সার্জারি, রেডিওলজি, প্যাথলজি, ডেন্টাল বিভাগের চিকিৎসক সহ দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের নোডাল অফিসার তথা স্বল্পক্ষত বিশেষজ্ঞ পবন মণ্ডল। মেডিক্যাল বোর্ড বসার অর্থ ছিল এটাই ওই অস্ত্রোপচারের পর যেসব সমস্যা হবে তার মোকাবিলা কীভাবে করা হবে, আগেভাগে তা ঠিক করা।
গত মঙ্গলবার ওই মহিলা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বুধবার বেলা ১১টা ৪৫ থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই জটিল অস্ত্রোপচার চলে। সমগ্র গোপনাঙ্গের বাইরের অংশে থাকা দুটি লিবিয়ামেজরা, লেবিয়া মাইনারা, ক্লাইটোরিস, মনস পিউবিসও বাদ যায়। এগুলো শুধু বাদ যাওয়াই নয়। ওই স্থানগুলোকে রীতিমতো চাপা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আলাদাভাবে প্রস্রাবের রাস্তাও তৈরি করা হয়। দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল সুকমল বিষয়ী বলেন, “বিভিন্ন বিভাগ মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে এই জটিল অস্ত্রোপচার করা যাবে কিনা। কিন্তু ডাক্তারবাবুরা সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছেন। স্বল্প পরিকাঠামোগত জটিল অস্ত্রোপচার সফলতার সঙ্গে করা হয়েছে। আমরা গর্বিত। “
যারা ওই অস্ত্রোপচারে ছিলেন তাঁরা হলেন, ওই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের প্রধান তথা অধ্যাপক তারাশংকর বাগ, ওই বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শিবশংকর মুর্মু, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুসার হাঁসদা, গাইনো সার্জেন সব্যসাচী মণ্ডল ও স্বল্প ক্ষত বিশেষজ্ঞ তথা এই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ক্যানসাররের নোডাল অফিসার পবন মণ্ডল। সেই সঙ্গে অ্যানেস্থিসিয়া কৌশিক মাঝি ও নবনীত কুমার। প্রসূতি বিভাগের প্রধান তথা অধ্যাপক তারাশঙ্কর বাগ বলেন , “ওই অস্ত্রোপচার ভীষণই জটিল ছিল। সফলতার সঙ্গে আমরা এই কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার এই প্রথম।” স্বল্পক্ষত বিশেষজ্ঞ পবন মণ্ডল বলেন, “দেশের নিরিখে ভালভার ক্যানসার একেবারেই বিরল। দেড় হাজার মহিলার মধ্যে দেড় থেকে দু’জনের এমন হয়ে থাকে।
ওই বৃদ্ধার ছেলে উমাশংকর প্রসাদ বলেন, “যখন স্থানীয় চিকিৎসক আমাদেরকে বাইরে নিয়ে যেতে বললেন তখন আমরা অসহায় বোধ করছিলাম। তারপর আমরা ঠিক করি যাই হোক না কেন দেবেন মাহাতো মেডিক্যালে চিকিৎসা করাবো। চিকিৎসকরা যেভাবে কাজ করলেন আমরা তাতে অভিভূত। আমরা তাঁদেরকে কুর্নিশ জানাই।” দেবেন মাহাতো মেডিক্যালের এই টিম ওয়ার্কে ওই বৃদ্ধা এখন স্থিতিশীল। ওই মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁকে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে ছুটি দেওয়া হবে।